BN/Prabhupada 0124 - আমরা আধ্যাত্মিক গুরুর আজ্ঞাকে মনে প্রাণে গ্রহণ করব



His Divine Grace Srila Bhaktisiddhanta Sarasvati Gosvami Prabhupada's Disappearance Day, Lecture -- Los Angeles, December 9, 1968

তাঁর জীবনে তিনি ছিলেন অখন্ড ব্রহ্মচারী। ভক্তিবিনোদ ঠাকুরের অনেক পুত্র ছিল, এবং তিনি ছিলেন পঞ্চম পুত্র। এবং তার আরও কয়েকজন ভাইও বিবাহ করেন নি। এবং আমার গুরু মহারাজ, তিনিও বিবাহ করেন নি। ছোটবেলা থাকেই তিনি ছিলেন কঠোর ব্রহ্মচারী, ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী মহারাজ। এবং এই আন্দোলনকে সারা বিশ্বব্যাপী শুরু করার জন্য তিনি অত্যন্ত কঠিন ব্রত নিয়েছিলেন। এটা ছিল তাঁর উদ্দেশ্য। ভক্তিবিনোদ ঠাকুর এটা করতে চেয়েছিলেন। ১৮৯৬ সালে,ভক্তিবিনোদ ঠাকুর এই কৃষ্ণ ভাবনামৃত আন্দোলনের শুরু করতে চেয়েছিলেন। "শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভ - তাঁর জীবনী ও শিক্ষা" এই গ্রন্থটি পাঠিয়ে। সৌভাগ্যবশত, সেই বছরটি আমার জন্ম বছর ছিল, এবং কৃষ্ণের ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে, আমরা সেই সংস্পর্শে এসেছিলাম । আমি একটি ভিন্ন পরিবারে জন্মগ্রহণ করি, আমার গুরু মহারাজ একটি ভিন্ন পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। কে জানত যে আমি তাঁর আশ্রয়ে আসব? কে জানত যে আমি আমেরিকায় আসব? কে জানত তোমরা আমেরিকান ছেলেরা আমার কাছে আসবে? এই সবই কৃষ্ণের ব্যবস্থা ছিল। আমরা এই ঘটনাগুলি কিভাবে ঘটছে বুঝতে পারছি না।

১৯৩৬ সালে..., আজকে ৯ই ডিসেম্বর, ১৯৩৮ (৬৮)। তার মানে ৩২ বছর আগে। বম্বেতে আমি একটা ব্যবসা করছিলাম। হঠাৎ করে, হয়ত আজকের দিনটিই হবে, ৯ বা ১০ ডিসেম্বর। সেই সময়ে, গুরু মহারাজ কিছুটা অসন্তুষ্ট ছিলেন, এবং তিনি সমুদ্রতীরবর্তী জগন্নাথ পুরীতে থাকতেন। সুতরাং আমি তাঁকে চিঠি লিখলাম, প্রিয় গুরুদেব, আপনার অন্য শিষ্যরা, ব্রহ্মচারী, সন্ন্যাসী তারা আপনার প্রত্যক্ষ সেবা করছে। এবং আমি একজন গৃহস্থ, আমি আপনার সঙ্গে থাকতে পারছি না, আমি আপনাকে সুন্দরভাবে সেবা করতে পারছি না। সুতরাং আমি জানতে চাই , আমি আপনাকে কিভাবে সেবা করব। শুধু ধারণা করছিলাম, আমি অনেকবার চিন্তা করেছিলাম যে, আমি তাঁকে কি করে নিষ্ঠাভরে সেবা করব। সেই পত্রের উত্তরের তারিখ ছিল ১৩ই ডিসেম্বর,১৯৩৬ সালে। সেই চিঠিতে তিনি লেখেন, "আমার প্রিয় অমুক, আমি খুব খুশি তোমার চিঠি পেয়ে। আমি মনে করি তুমি আমাদের আন্দোলনকে ইংরেজিতে প্রচার করার চেষ্টা করবে।" "এবং এটা তোমার জন্য ভাল হবে, এবং মানুষরা তোমাকে সাহায্য করবে।" "এবং আমি চাই ..." এটা তার নির্দেশ ছিল।

এবং তারপর ১৯৩৬ সালে, ৩১শে ডিসেম্বর- তার মানে এই চিঠিটি লেখার ঠিক পরপরেই , পনের দিনের মধ্যেই তিনি অপ্রকট হলেন। কিন্তু আমি আমার আধ্যাত্মিক গুরুর এই আদেশটি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করেছিলাম, কিন্তু আমি মনে করিনি যে আমাকে এই - এই জিনিস করতে হবে। আমি সেই সময় একজন গৃহস্থ ছিলাম। কিন্তু এটা কৃষ্ণের ব্যবস্থা। যদি আমরা কঠোরভাবে গুরুদেবের সেবা করার চেষ্টা করি, তার আদেশ পালন করি, তবে কৃষ্ণ আমাদের সব সুবিধা প্রদান করবেন। এটাই হচ্ছে রহস্য। যদিও কোন সম্ভাবনা ছিল না, আমি কখনও চিন্তাও করি নি, কিন্তু আমি এটি গুরুত্ব সহকারে নিয়েছিলাম ভগবদ-গীতার উপর বিশ্বনাথ চক্রবর্তী ঠকুরের একটি ভাষ্য অধ্যয়ন করে। ভগবদ গীতার একটি শ্লোকে বলা হয়েছে ব্যবসায়াত্মিকা বুদ্ধি একেহ কুরুনন্দন (ভ.গী. ২.৪১) এই শ্লোকের সম্বন্ধে, বিশ্বনাথ চক্রবর্তী ঠাকুর তার ভাষ্যে বলেছেন যে আমাদের মনে প্রাণে গুরুদেবের আদেশকে জীবন প্রাণ বলে গ্রহণ করা উচিত। আমাদের উচিত তাঁর নির্দেশ পালন করার, গুরুদেবের কোন নির্দিষ্ট নির্দেশনা যদি থাকে , খুব শক্তভাবে, আমাদের ব্যক্তিগত লাভ বা ক্ষতির সুবিধা বিবেচনা করেই তা পালন করা উচিত।

সুতরাং আমি সেই শক্তিতে একটু চেষ্টা করেছিলাম। তাই তিনি আমাকে তাঁর সেবা করার জন্য সব সুবিধা দিয়েছেন। এই পর্যায়ে এসেছি, এই বয়সে আমি তোমাদের দেশে এসেছি, এবং তোমরাও এই আন্দোলন গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করছ, এটি বুঝতে চেষ্টা করছ। আমাদের এখন কিছু বই রয়েছে। তাই এই আন্দোলনের অবস্থান কিছুটা দৃঢ়ও হয়েছে। তাই এই উৎসব আমার শ্রীগুরুদেবের তিরোভাব তিথি উপলক্ষ্য করে, আমি তাঁর ইচ্ছা ও আদেশ চালিয়ে যাবার চেষ্টা করছি, ঠিক একইভাবে আমি তোমাদেরকেও আমার একই আদেশ নির্বাহ করতে অনুরোধ করব। আমি একটি বৃদ্ধ মানুষ, আমি যে কোন মুহূর্তে মারা যেতে পারি। এটা প্রকৃতির আইন কেউ এটা রোধ করতে পারেন না। সুতরাং এটা খুব আশ্চর্যের নয়, কিন্তু আমার গুরু মহারাজের তিরোভাবের এই শুভ দিনে আমার তোমাদের কাছে নিবেদন, যে, অন্তত কিছু মাত্রায় হলেও তোমরা কৃষ্ণ ভাবনামৃত আন্দোলনের সার বুঝতে পেরেছ । তোমাদের প্রচার করার চেষ্টা করা উচিত, মানুষ এই চেতনা পাবার জন্য দুঃখ করছে।