BN/Prabhupada 1061 - ভগবদ্গীতার বিষয়বস্তুতে আমরা পাঁচটি মুল তত্ত্ব উপলব্দি করতে পারি

The printable version is no longer supported and may have rendering errors. Please update your browser bookmarks and please use the default browser print function instead.


660219-20 - Lecture BG Introduction - New York

ভগবদ্গীতার বিষয়বস্তুতে পাঁচটি মূল তত্ত্ব জ্ঞান নিহিত আছে। পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃ্ষ্ণ, তিনি অবতরন করেছেন, যদা যদা হি ধর্ম স্য গ্লানির্ভবতি (গীতা ৪/৭), শুধুমাত্র জীবনের মূল উদ্দেশ্য সংস্থাপনের জন্য। মানুষ যখন তার জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য ‍ভুলে যায়, মানব জন্মের প্রকৃত উদ্দেশ্য, তখন এটাকে ধর্মস্য গ্লানি বলা হয়, মানব জীবনের দৈনিক ধর্মের বাধা। সুতরাং এমতাবস্থায়, হাজারো হাজারো মানুষের মধ্যে, যিনি জাগ্রত করেছেন, যিনি নিজের আত্মিক অবস্থান জাগ্রত করেছেন, তাঁর জন্য এই ভগবদ্গীতা বলা হয়েছে। অজ্ঞানরূপ বাঘিনী আমাদেরকে গিলে ফেলেছে, এবং পরমেশ্বর ভগবান সর্বজীবে অহৈতুকী কৃপা পরায়ণ, বিশেষতঃ মানুষের জন্যেই তিনি ভগবদ্গীতা দান করেছেন। তাঁর বন্ধু অর্জুনকে শিষ্যত্ব বরণ করিয়ে।

অর্জুন নিশ্চিতভাবে....পরমেশ্বর ভগবানের শ্রীকৃষ্ণের পার্ষদ হবার জন্য, তিনি অজ্ঞানতার ঊর্ধে ছিলেন। তা সত্ত্বেও অর্জুনকে কুরুক্ষেত্রের রণাঙ্গনে অজ্ঞানতার মধ্যে ফেলে দিয়েছিল শুধুমাত্র পরমেশ্বর ভগবানের কাছে জীবনের সমস্যা সম্বন্ধে প্রশ্ন করার জন্য, যাতে পরমেশ্বর ভগবান মানুষের ভবিষ্যৎ বংশধরদের কল্যাণার্থে তাদেরকে ব্যাখ্যা করতে পারে, সেই অনুযায়ী জীবনের পরিকল্পনা এবং কার্য নির্বাহ করতে পারে, যাতে তাঁর জীবন, মানব জীবনের উদ্দেশ্য সাফল্যমণ্ডিত করতে পারে

সুতরাং এই ভগবদ্গীতার বিষয়বস্তুকে পাঁচটি মূল তত্ত্বে ভাগ করা হয়েছে। সর্বপ্রথম ভগবানের স্বরূপ বর্ণনা করা হয়েছে। এটা ভগবদ্‌তত্ত্ব বিজ্ঞানের প্রারম্ভিক শিক্ষা। তাই এখানে ভগবদ্তত্ত্ব বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা করা হয়েছে। পরবর্তী তত্ত্ব, জীব, জীবের স্বরূপ ঈশ্বর এবং জীব। ভগবান, পরমেশ্বর ভগবান, তিনিই ঈশ্বর। ঈশ্বর মানে নিয়ন্তা, এবং ”জীব”, মানে সকল জীব ”জীব” সকল জীব, তারা ঈশ্বর বা নিয়ন্ত্রণকারী নন। তারা নিয়ন্ত্রিত। কৃত্রিমভাবে যদি আমি বলি যে আমি নিয়ন্ত্রিত নই, আমি মুক্ত এইটি তত্ত্বজ্ঞান সম্পন্ন মানুষের লক্ষণ নয়। জীব সর্বাবস্থাতেই নিয়ন্ত্রিত কমপক্ষে তার বদ্ধাবস্থায় সে নিয়ন্ত্রিত। সুতরাং এই ভগবদ্গীতার বিষয়বস্তুতে ঈশ্বর সম্বন্ধে বুঝানো হয়েছে পরম নিয়ন্তা এবং নিয়ন্ত্রিত জীব সম্পর্কে, এবং প্রকৃতি, জড়া প্রকৃতি, পরবর্তী তত্ত্ব সময় বা কাল সমগ্র ব্রহ্মাণ্ডের অস্তিত্বের ব্যাপ্তিকাল, বা এই জড়া প্রকৃতির প্রকাশ, এবং ব্যাপ্তিকাল বা দিব্য সময়। এবং কর্ম, কর্ম মানে কার্যকলাপ। সবকিছু, সমগ্র বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের প্রকাশ বিভিন্ন কার্যকলাপে পরিপূর্ণ। বিশেষত সকল জীবসমূহ বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপে যুক্ত। সুতরাং আমাদেরকে ভগবদ্গীতা থেকে ঈশ্বর সম্পর্কে শিখতে হবে। ভগবান কে? জীব, জীবসমূহ কি? এবং প্রকৃতি, জড়া প্রকৃতির প্রকাশ কি ? এবং ইহা কিভাবে সময় দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় এবং সেই ক্রিয়াকলাপ সমূহ কি?

এখন ভগবদ্গীতায় পাঁচটি বিষয়বস্তুর মধ্যে প্রতিষ্ঠিত, পরমেশ্বর ভগবান, বা কৃষ্ণ, বা পরব্রহ্ম, বা পরমাত্মা.. যে নামেই তাঁকে সম্বোধন করা হউক। তিনিই পরম নিয়ন্তা। পরম নিয়ন্তা । সুতরাং পরম নিয়ন্তা সর্বশ্রেষ্ট। সকল জীবই পরম নিয়ন্তার মতোই গুণগতভাবে সমান। ঠিক পরম নিয়ন্তা পরমেশ্বর ভগবানের মতো জড়া প্রকৃতি জাত এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের সবকিছু ভগবান নিয়ন্ত্রন করছেন, কিভাবে.. যা ভগবদ্গীতার শেষ অধ্যায়গুলিতে বর্ণনা করা হয়েছে। এই জড়া প্রকৃতি স্বাধীন নয়। পরমেশ্বরের নির্দেশে তাঁকে কাজ করতে হচ্ছে। ময়াধ্যক্ষেণ প্রকৃতিঃ সূয়তে সচরাচরম্(গীতা ৯/১০) এই জড়া প্রকৃতি আমার নির্দেশনায় ক্রিয়াশীল “ময়াধ্যক্ষেণ” আমার অধ্যক্ষতায়।