BN/Prabhupada 0051 - অল্পবুদ্ধিসম্পন্ন মস্তিস্ক বুঝতে পারবে না এই দেহের অতীত কি রয়েছে



Interview with Newsweek -- July 14, 1976, New York

সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী: আপনি কি মনে করেন যে একদিন এই কৃষ্ণভাবনামৃত বিশ্বের সকল মানুষের কাছে ছড়িয়ে যাবে?

শ্রীল প্রভুপাদ: সেটা সম্ভব না। এটা অপেক্ষাকৃত বুদ্ধিমান শ্রেণীর মানুষদের জন্য। সুতরাং এটি, এই আন্দোলনটি, সবচেয়ে বুদ্ধিমান শ্রেণীর মানুষদের জন্য ।

সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী: কিন্তু সবচেয়ে বুদ্ধিমান শ্রেণীর মধ্যে...

শ্রীল প্রভুপাদ : যদি কেউ বুদ্ধিমান শ্রেণীর না হয়, তবে সে বুঝতে পারবে না। তাই আমরা আশা করি না যে সবাই বুদ্ধিমান। কৃষ্ণ যেই ভজে সে বড় চতুর। যদি একজন খুব বুদ্ধিমান না হয়, তবে সে কৃষ্ণ ভাবনামৃতে আসবে না, কারন এটি একটা অন্য বিষয়। মানুষ নিবিষ্ট হয় জীবনের শারীরিক ধারণার সঙ্গে। কিন্তু এই বিষয়টি একটু অন্য। তাই নিস্তেজ মস্তিষ্ক, এই শরীরের উপরেও কিছু আছে তা বুঝতে পারে না। তাই আপনি আশা করতে পারেন না যে সবাই কৃষ্ণভাবনামৃ্ত গ্রহণ করবে। এটা সম্ভব নয়।

সাক্ষাৎকারক: মানবজাতির উদ্ভব সম্বন্ধীয় পরিপূর্ণতা সম্পর্কে অনেক কথা বলা হয়েছে, অথবা বলা যায়, উদ্ভব সম্বন্ধীয় পরিপূর্ণতা প্রবর্তন করা।

প্রভুপাদ : উদ্ভব সম্বন্ধীয় কি?

সাক্ষাতকার: ভাল ... উদ্ভব সম্বন্ধীয় পরিপূর্ণতা কি?

বালী-মর্দন : আমরা উদ্ভব সম্বন্ধীয় বিজ্ঞান সম্পর্কে গতকাল আলোচনা করেছি। তারা বৈশিষ্ট্যগুলি বোঝার চেষ্টা করে, কীভাবে শরীর ও মন গঠিত হয় এবং তারপর এটি পরিবর্তন করার চেষ্টা করে।

প্রভুপাদ : আমরা ইতিমধ্যেই ... ওই বইটি কোথায়?

রামেশ্বর : স্বরুপ দামোদরের বই।

প্রভুপাদ : হ্যাঁ । ওই বইটা আনো।

রামেশ্বর : তোমার প্রশ্ন কি?

সাক্ষাতকার: আমার প্রশ্ন হল ... আপনি আগে প্রযুক্তিগত সরঞ্জাম ব্যবহার সম্পর্কে উল্লেখ করেছিলেন। এবং যদি কিছু সমাজ আছে যেখানে কিছু আছে ...

প্রভুপাদ : সেই বই এখানে নেই? কোথাও?

সাক্ষাত্কারী: আমি আপনাকে জিজ্ঞাসা করি প্রযুক্তিগত উপায়ে মানুষ যদি কিছুটা উন্নত হয়, অন্য কথায়, অল্প কিছু মানুষেরা অধিক বুদ্ধিমান, তো এখন আপনার বিবেচনায় বুদ্ধিমান মানুষ হতে গেলে তার কি থাকা চাই...

শ্রীল প্রভুপাদ : বুদ্ধিমান মানুষ ... যদি কেউ বুঝতে পারে যে সে এই দেহ নয় - সে এই দেহের অভ্যন্তরে বিরাজমান... ঠিক যেমন আপনি একটি জামা পরে আছেন কিন্তু আপনি এই জামাটি নন। যে কেউ এটি বুঝতে পারবে। আপনি জামাটির ভেতরে আছেন। সেইরকম যে বুঝতে পারে যে সে এই শরীর নয়-সে এই শরীরের ভেতরে রয়েছে... যে কেউই এটি বুঝতে পারে কারণ যখন শরীরটি মারা যায় , তখন পার্থক্যটি কি থাকে? যেহেতু শরীরের মধ্যের জীবন্ত শক্তিটি চলে গেছে, তাই আমরা শরীরটিকে মৃত বলি।

সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীঃ কিন্তু কিছু খুব বুদ্ধিমান মানুষ আছে যারা আধ্যাত্মিকভাবে আলোকিত নন, সম্ভবত এমন মানুষও যারা বুঝতে পারে যে তারা বা এই দেহটিই সবকিছু নয়, দেহটির মৃত্যু হয়েছে এবং এছাড়াও অন্য কিছু রয়েছে। এই সব লোকেরা কেন তাহলে আধ্যাত্মিকভাবে সচেতন নয়?

শ্রীল প্রভুপাদঃ কেউ যদি এই সহজ জিনিসটি বুঝতে না পারে যে সে দেহটি নয়, তবে সে পশু ছাড়া আর কিছুই নয়। এটি আধ্যাত্মিক স্তরে বোঝার সর্বপ্রথম বিষয়। যদি সে মনে করে যে সে এই শরীরটি, তাহলে সে একটা পশুর পর্যায়ে রয়েছে। রামেশ্বরঃ তার প্রশ্নটি হচ্ছে ... ধরুন, কারও হয়তো মৃত্যুর পর পুনর্জন্মে কিছুটা বিশ্বাস আছে, এবং তিনি হয়তো জাগতিক বিচারেও একজন বুদ্ধিমান ব্যক্তি। কেন সে স্বাভাবিকভাবেই...?

শ্রীল প্রভুপাদঃ না, জাগতিক মান অনুযায়ী বুদ্ধিমত্তা বলে কিছু নেই। জাগতিক ধারণাটি হচ্ছে "আমি এই দেহটি, আমি আমেরিকান, আমি ভারতীয়, আমি শেয়াল, আমি কুকুর, আমি মানুষ। এটি হচ্ছে জাগতিক ধারণা। পারমার্থিক জ্ঞানটি এর অতীত, যে "আমি এই শরীরটি নই"। এবং যখন সে তার সেই আধ্যাত্মিক পরিচয়টি জানার চেষ্টা করে তখনই সে বুদ্ধিমান অন্যথায় সে বুদ্ধিমান নয়। সাক্ষাৎকারগ্রহণকারীঃ তার মানে কি এই যে...

শ্রীল প্রভুপাদঃ তাদেরকে 'মূঢ়' হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। 'মূঢ়' মানে গাধা । সুতরাং প্রথমে এটি বুঝতে হবে যেএই শরীরটি দিয়ে নিজের পরিচয় ভাবা উচিত নয়। সাক্ষাৎকারগ্রহণকারীঃ এর পর কি বুঝতে হবে...?

শ্রীল প্রভুপাদঃ কুকুরের মতো। কুকুর মনে করে এই দেহটিই সে। যদি একজন মানুষও একই রকম মনে করে যে সে এই শরীরটি - তাহলে সে কুকুরের চেয়ে উন্নত কিছু নয়। সাক্ষাৎকারগ্রহণকারীঃ এর পরবর্তী জ্ঞানগুলি কি? বলিমর্দনঃ আপনি যদি বুঝতে পারেন যে আপনি শরীর নন, তাহলে না পরবর্তী জ্ঞানের কথা আসবে।

শ্রীল প্রভুপাদ : হা! এটা বুদ্ধিমানের মতো প্রশ্ন । তারপর তাকে বুঝতে হবে যে "আমি শুধু এই শরীরটির ধারণা নিয়েই ব্যস্ত হয়ে আছি। তাহলে আমার করণীয় কি? এটি ছিল সনাতন গোস্বামীর প্রশ্ন যে, "আপনি আমাকে জাগতিক কর্তব্যকর্ম থেকে মুক্তি দিলেন, তাহলে এখন আমাকে বলুন আমার কি করা কর্তব্য।" আর এই জন্যই কাউকে আধ্যাত্মিক গুরুর কাছে যেতে হয়, এটি জানতে, এটি বুঝতে যে এখন তার কি করণীয়। "যদি আমি এই শরীরটি নাই হই তাহলে আমার কি করা কর্তব্য?" কারণ আমি এই শরীরের জন্য সারাদিন-রাত ব্যস্ত। আমি খাচ্ছি, আমি ঘুমোচ্ছি, আমি যৌনসঙ্গ করছি, আমি প্রতিরক্ষা করছি - এই সব হচ্ছে শারীরিক প্রয়োজনীয়তা আমি যদি আমি শরীরটিই না হই তাহলে আমার কর্তব্য কি? সেটি হচ্ছে বুদ্ধিমত্তা। রামেশ্বরঃ সুতরাং আপনি বলেছিলেন, "আপনি এই শরীরটি নন এটা বোঝার পর পরবর্তী জ্ঞাতব্য বিষয় কি?" শ্রীল প্রভুপাদ বলছেন যে পরবর্তী জিনিসটি জানতে হবে যে আপনার কি করা উচিত, এবং সেই জন্য, আপনাকে একজন আত্মোপলব্ধ ব্যক্তি বা আধ্যাত্মিক গুরুর থেকে তথ্য গ্রহণ করতে হবে।

সাক্ষাতকার গ্রহণকারীঃ পারমার্থিক গুরু মানে কি তার গ্রন্থরূপে?

বলিমর্দনঃ ব্যক্তিগতভাবে বা ...

পুষ্ট কৃষ্ণঃ শ্রীল প্রভুপাদ ব্যাখ্যা করছিলেন যে এখন দেহগত ধারণার মধ্যে আমাদের অনেক দায়িত্ব রয়েছে। আমরা কাজ করছি, আমরা যৌন জীবনে লিপ্ত আছি, আমরা খাচ্ছি, ঘুমাচ্ছি, নিজেদের রক্ষার করছি - অনেক কিছু করছি। এই সবকিছুই দেহের সঙ্গে সম্পর্কিত। কিন্তু যদি আমি দেহ না হই তাহলে আমার দায়িত্ব কি? আমার কর্তব্য কি? তাই পরবর্তী বিষয়টি হল যে যখন কেউ এটি বুঝতে পেরেছে, তাহলে তাকে আধ্যাত্মিক গুরুর থেকে নির্দেশ নিতে হবে, অগ্রগতি সাধন করতে এবং বাস্তব কর্তব্য কি তা বুঝতে। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

শ্রীল প্রভুপাদঃ এমন কি খাওয়া, ঘুমানো, যৌন জীবন এবং প্রতিরক্ষার জন্যও আমাদের কারোর কাছ থেকে কিছু জ্ঞানলাভ করা প্রয়োজন। ধ্রুন, খাওয়ার জন্য, আমাদের বিশেষজ্ঞদের থেকে জানতে হবে কি ধরণের খাবার আমাদের গ্রহণ করা উচিৎ। কি ধরনের ভিটামিন, কি ধরনের ... তাই শিক্ষার প্রয়োজন এবং ঘুমের জন্যও শিক্ষা প্রয়োজন। এবং তাই দেহগত ধারণার এই জীবনের জন্যও আমাদেরকে অন্যদের থেকে জ্ঞান গ্রহণ করতে হবে। সুতরাং যখন সেই ব্যক্তিটি দেহগত ধারণার অতীত স্তরে- তিনি বুঝতে পারেন যে "আমি এই শরীর নই; আমি চিন্ময় আত্মা" - একইভাবে তাকে একটি বিশেষজ্ঞ থেকে পাঠ এবং শিক্ষা নিতে হবে।