BN/Prabhupada 0052 - ভক্ত ও কর্মীর মধ্যে পার্থক্য



Lecture on SB 1.2.9-10 -- Delhi, November 14, 1973

এটিই হচ্ছে ভক্তি এবং কর্মের মধ্যে পার্থক্য। নিজের ইন্দ্রিয় তৃপ্তি হচ্ছে কর্ম এবং ভগবানকে সন্তুষ্ট করা হচ্ছে ভক্তি। একই জিনিস। তাই লোকেরা বুঝতে পারে না ভক্ত এবং কর্মীর মধ্যে পার্থক্য কি। কর্মী নিজের ইন্দ্রিয় তৃপ্তি সাধন করছে এবং ভক্ত শ্রীকৃষ্ণের ইন্দ্রিয় তৃপ্তি সাধন করছেন। কিছু ইন্দ্রিয় তৃপ্তি অবশ্যই থাকবে। কিন্তু যখন আপনি শ্রীকৃষ্ণের ইন্দ্রিয় প্রীতিবিধান করেন তখন সেটা ভক্তি। হৃষীকেন হৃষীকেশ সেবনং ভক্তিরুচ্চতে (চৈ.চ.মধ্য ১৯.১৭০) হৃষীক মানে ইন্দ্রিয়, শুদ্ধ ইন্দ্রিয়। আমি অন্য আরেকদিন এটি ব্যাখ্যা করছিলাম যে,

সর্বোপাধি বিনির্মুক্তং
তৎপরৎত্বেন নির্মলম্
হৃষীকেন হৃষীকেশ
সেবনম ভক্তিরুচ্চতে
(চৈ.চ. মধ্য ১৯.১৭০)

ভক্তি মানে কাজকর্ম বন্ধ করে দেওয়া নয়। ভক্তি মানে কোন খামখেয়ালীপূর্ণ পাগলামো নয়। সেটা ভক্তি নয়। ভক্তি অর্থ হচ্ছে আপনার সমস্ত ইন্দ্রিয়কে ইন্দ্রিয়ের মালিকের সন্তুষ্টির যুক্ত করা। এরই নাম ভক্তি। এইজন্য শ্রীকৃষ্ণের আরেক নাম সমস্ত হৃষীকেশ, হৃষীক মানে ইন্দ্রিয়। এবং হৃষীকেশ, তিনি হলেন সমস্ত ইন্দ্রিয়ের ঈশ্বর। প্রকৃতপক্ষে, আমাদের ইন্দ্রিয়গুলি স্বাধীনভাবে কাজ করছে না। আমরা এটি বুঝতে পারি। শ্রীকৃষ্ণ নির্দেশ করছেন। সর্বস্য চাহং হৃদিসন্নিবিষ্ট মত্তঃ স্মৃতিঃ জ্ঞানম্ অপোহনম্ চ (গীতা ১৫.১৫) মত্তঃ স্মৃতিঃ জ্ঞানম্ অপোহনং চ। একজন বিজ্ঞানী কাজ করছেন কারণ শ্রীকৃষ্ণ তাকে সাহায্য করছেন, এমন না যে সে স্বাধীনভাবে কাজ করছে। তা সম্ভব নয়। কিন্তু সে এভাবেই করতে চেয়েছিল। অতএব শ্রীকৃষ্ণ তাকে সুযোগ-সুবিধা প্রদান করছে। কিন্তু আসলে শ্রীকৃষ্ণ কাজ করছেন। এটি উপনিষদে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। শ্রীকৃষ্ণ কাজ না করলে, শ্রীকৃষ্ণ না দেখলে, আপনি দেখতে পারবেন না। যেমন ব্রহ্মসংহিতাতে সূর্যালোক ব্যাখ্যা করা হয়েছে। 'যচ্চক্ষুরেষ সবিতা সকলগ্রহানা', সূর্য শ্রীকৃষ্ণের একটি চক্ষু।

যচ্চক্ষুরেষ সবিতা সকল গ্রহাণাং
রাজা-সমস্ত-সুরমূর্তিরশেষতেজাঃ
যস্যাজ্ঞয়া ভ্রমতি সংভৃত-কালচক্র
গোবিন্দম্ আদি পুরুষম্ তমহং ভজামি।

তাই সূর্য শ্রীকৃষ্ণের একটি চক্ষু বিশেষ। কারণ সূর্য উদিত হচ্ছে, সূর্য দেখছে, তাই আপনি দেখতে পাচ্ছেন। আপনি স্বাধীনভাবে দেখতে পারেন না। আপনি আপনার চোখ এর উপর এত গর্বিত, যদি সূর্য আলো না থাকে তবে আপনার চোখের কি দাম আছে? আপনি দেখতে পারেন না। এমনকি এই বিদ্যুৎ-ও, যেটি সূর্য থেকেই উৎপন্ন হয়। তাই আসলে যখন শ্রীকৃষ্ণ দেখেন, তখন আপনি দেখতে পারেন। সেটিই হচ্ছে আমাদের প্রকৃত অবস্থান। তাই আমাদের ইন্দ্রিয়গুলি ... ভগবৎ-গীতাতে বলা হয়, সর্বতঃ পাণি-পাদং-তৎ। সর্বতঃ পাণিপাদ... সর্বত্র শ্রীকৃষ্ণের হাত এবং পা রয়েছে। সেগুলো কি? আমার হাত, তোমার হাত, তোমার পা - সেগুলো সব শ্রীকৃষ্ণের। ঠিক যেমন কেউ বলছে আমার সারা পৃথিবীতে অনেক শাখা রয়েছে। এই শাখাগুলি সর্বোচ্চ ব্যক্তির পরিচালনায় কাজ করছে। সেইরকম শ্রীকৃষ্ণও। তাই শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন হৃষিকেশ , হৃষিকেশ। তাই আমাদের কাজ হচ্ছে ...ভক্তি মানে যখন আমরা আমাদের হৃষীক, আমাদের ইন্দ্রিয়, আমাদের ইন্দ্রিয়কে নিযুক্ত করবো... ইন্দ্রিয়ের অধীশ্বর হৃষীকেশ-এর সেবায়। সেটিই হচ্ছে আমাদের আদর্শ জীবন। সেটিই হচ্ছে সর্বোত্তম... কিন্তু যেই মুহূর্তে আমরা আমাদের ইন্দ্রিয়গুলোকে আমাদের নিজেদের তৃপ্তির কাজে লাগাতে বাসনা করবো, তখন সেটিই হয়ে যাবে কর্ম। তাকে বলা হয়েছে জাগতিক জীবন। সুতরাং একজন ভক্তের জন্য জড় বলে কিছুই নেই। এটিই হচ্ছে ঈশাবাস্যং ইদং সর্বং (ঈশোপনিষদ ১) ভক্ত সবকিছুই শ্রীকৃষ্ণের বলে দেখেন। ঈশাবাস্য ইদং সর্বম্ যৎকিঞ্চ জগত্যাং জগৎ, তেনে ত্যাক্তেন ভুঞ্জিথা। সবকিছুই শ্রীকৃষ্ণের । তাই যা কিছু শ্রীকৃষ্ণ আমাদেরকে দিচ্ছেন, ঠিক একজন মনিবের ন্যায়। মনিব তাঁর ভৃত্যের জন্য কিছুটা বরাদ্দ করেন, "নাও তুমি এটি উপভোগ করতে পার"। সেটি হচ্ছে প্রসাদ। প্রসাদে সর্ব-দুঃখানাং হানিরস্যপোজায়তে... এই হচ্ছে প্রকৃত জীবন। যদি তুমি কৃষ্ণভাবনাময় হও, যদি তুমি বুঝতে পারো সবকিছুই শ্রীকৃষ্ণের, এমন কি আমার এই হাত এবং পা এগুলিও শ্রীকৃষ্ণের , আমার শরীরের সমস্ত অংশগুলি শ্রীকৃষ্ণের , তাই এগুলি শ্রীকৃষ্ণের সেবার জন্য ব্যবহার করতে হবে, তাহলে তার নাম 'ভক্তি'।

অন্যাভিলাষিতাশুন্যং
জ্ঞানকর্মাদি-অনাবৃতং,
আনুকুল্যেন কৃষ্ণানু
শীলং ভক্তিরুত্তমা
(ভক্তিরসামৃতসিন্ধু ১.১.১১)

সেটিই অর্জুন করেছিলেন। তিনি যুদ্ধ না করে তার নিজের ইন্দ্রিয় তৃপ্তি সাধন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি ভগবদ্গীতার জ্ঞান শোনার পর সম্মত হয়েছিলেন যে "হ্যাঁ শ্রীকৃষ্ণই হলেন পরম পুরুষ"।

অহম্ সর্বস্য প্রভবো
মত্ত সর্বং প্রবর্ততে
ইতি মত্বা ভজন্তে মাং
বুধা ভাব-সমন্বিতা
(গীতা ১০.৮)

এই জিনিসগুলি ভগবদ্গীতাতে খুব সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। তা হচ্ছে আধ্যাত্মিক জীবনের প্রাথমিক অধ্যয়ন। আর আমরা যদি প্রকৃতপক্ষে ভগবদ্গীতার শিক্ষার ব্যাপারে সম্পূর্ণরূপে দৃঢ়বিশ্বাসী হতে পারি, তবে আমরা শ্রীকৃষ্ণের কাছে আত্মসমর্পণ করতে পারব। শ্রীকৃষ্ণ তাই-ই চান। সর্বধর্মান্ পরিত্যাজ্য মামেকং শরণং ব্রজ (গীতা ১৮.৬৬) তিনি সেটিই চান। যখন আমরা এই পন্থাটি গ্রহণ করি, তখন তাকে বলে শ্রদ্ধা। শ্রদ্ধা। শ্রীল কবিরাজ গোস্বামী ব্যাখ্যা করেছেন যে শ্রদ্ধার অর্থ কি?