BN/Prabhupada 0077 - আপনি বৈজ্ঞানিক এবং দর্শনিক অধ্যয়ন করতে পারেন



Ratha-yatra -- San Francisco, June 27, 1971

শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন যারা নিরন্তর, চব্বিশ ঘণ্টাই শ্রীকৃষ্ণের সেবায় নিয়োজিত থাকে... ঠিক যেমন এই সমস্ত ছাত্ররা, কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের সদস্যরা, আপনারা তাদেরকে চব্বিশ ঘণ্টাই কৃষ্ণসেবায় নিয়োজিত থাকতে দেখবেন। আমি বলতে চাচ্ছি যে, এটিই হচ্ছে কৃষ্ণভাবনামৃতের গুরুত্ত্ব। তারা সর্বদাই নিযুক্ত। এই রথযাত্রা মহোৎসব হচ্ছে তাদের মধ্যে একটি অনুষ্ঠান, যাতে করে অন্ততপক্ষে একদিন, আপনারা সবাই কৃষ্ণভাবনামৃতে নিযুক্ত থাকতে পারবেন। তো এটি হচ্ছে একটু অনুশীলন মাত্র, আর এভাবে যদি আপনারা সারা জীবন ধরে অনুশীলন করে যান, তাহলে মৃত্যুর সময় যদি সৌভাগ্যক্রমে আপনি শ্রীকৃষ্ণকে স্মরণ করতে পারেন তাহলে আপনার জীবন সার্থক। এই জন্যই অনুশীলনের প্রয়োজন। যং যং বাপি স্মরণ লোকে ত্যাজত্যন্তে কলেবরম (ভগবদ্গীতা ৮.৬)। আমদেরকে এই দেহ ত্যাগ করতে হবে, এটি নিশ্চিত। কিন্তু মৃত্যুর সময় যদি আমরা শ্রীকৃষ্ণকে স্মরণ করতে পারি, তৎক্ষণাৎ আপনি কৃষ্ণলোকে স্থানান্তরিত হবেন। শ্রীকৃষ্ণ সর্বত্রই রয়েছেন, কিন্তু তবুও শ্রীকৃষ্ণের একটি বিশেষ বাসস্থান রয়েছে, যেটিকে বলে গোলোক বৃন্দাবন। আপনারা বুঝতে পারবেন যে আমাদের এই দেহ, দেহ মানে ইন্দ্রিয়সমূহ, আর ইন্দ্রিয়ের ঊর্ধ্বে রয়েছে মন, যা খুই সূক্ষ, এই মন ইন্দ্রিয় গুলোকে নিয়ন্ত্রন করে থাকে, আর মনের ঊর্ধ্বে রয়েছে বুদ্ধি, আর বুদ্ধির উপরে রয়েছে আত্মা। আমাদের কোন কিছু জানা নেই, কিন্তু যদি আমরা ভক্তিযোগ অনুশীলন করি, ধীরে ধীরে আমরা বুঝতে পারব আমি কে, আমি এই দেহ নই। এমন কি বড় বড় সব পণ্ডিত, দার্শনিক আর বিজ্ঞানীরা, তারাও এই দেহগত ধারণা বা দেহাত্মবুদ্ধির মধ্যে রয়েছে, প্রত্যেকেই ভাবছে, "আমি হচ্ছি এই দেহ," কিন্তু এটি ভুল। আমরা এই দেহ নই। আমি এইমাত্র ব্যাখ্যা করলাম। দেহ মানে ইন্দ্রিয় সমূহ, কিন্তু ইন্দ্রিয় মনের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, আর মন নিয়ন্ত্রিত হয় বুদ্ধির দ্বারা, আর বুদ্ধি নিয়ন্ত্রিত হয় আত্মার দ্বারা। সেটা আপনি বুঝতে পারেন না। সারা পৃথিবী জুড়ে এমন কোন শিক্ষা ব্যবস্থা নেই, যার দ্বারা আত্মার এই অস্তিত্বকে বোঝানো যায়, যেটি জানা হচ্ছে মানুষের জন্য প্রধান প্রয়োজন। মানুষের জীবন পশুদের মতো সময় নষ্ট করার জন্য নয়, শুধু আহার, নিদ্রা, ভয়, মৈথুন। এটি পশুর জীবন। মানুষের অধিক বুদ্ধিমত্তাকে এটি জানার জন্য কাজে লাগানো উচিত "আমি কে? আমি চিন্ময় আত্মা।" যদি আপনি এটি বুঝতে পারেন যে "আমি চিন্ময় আত্মা," তাহলে জীবনের এই দেহগত ধারণা, যা কিনা সারা বিশ্বকে ব্যাপকভাবে ধ্বংস করে দিচ্ছে... দেহাত্মবুদ্ধির কারণে আমি ভাবছি "আমি ভারতীয়," আপনি ভাবছেন "আমেরিকান," সে ভাবছে একটা কিছু, কিন্তু আমরা সবাই এক। আমরা চিন্ময় আত্মা। আমরা সবাই শ্রীকৃষ্ণের, জগন্নাথের নিত্য সেবক।

তো আজকে খুব সুন্দর আর মঙ্গলময় একটি দিন। এই দিনে শ্রীকৃষ্ণ, যখন তিনি এই গ্রহে উপস্থিত ছিলেন, তিনি সূর্যগ্রহণ উপলক্ষে কুরুক্ষেত্রে উপস্থিত হয়েছিলেন, শ্রীকৃষ্ণ তাঁর ভ্রাতা বলরাম আর ভগ্নী সুভদ্রাকে নিয়ে, কুরুক্ষেত্রের মাঠ ভ্রমনে বেরিয়েছিলেন। এই কুরুক্ষেত্র এখনও ভারতে বর্তমান। যদি আপনারা কেউ ভারতে যান, তাহলে খুঁজে দেখতে পারেন এই কুরুক্ষেত্র এখনও সেখানে রয়েছে। তো এই রথযাত্রা অনুষ্ঠান সেই স্মৃতি রক্ষার্থে অনুস্থিত হয় শ্রীকৃষ্ণের তাঁর ভাই ও বোনের সাথে কুরুক্ষেত্র ভ্রমনের। ভগবান জগন্নাথ, শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু, তিনি পরমানন্দে ছিলেন। তিনি শ্রীমতি রাধারানীর মতো প্রেমময়ী ভাবে ছিলেন, তাই তিনি ভাবছিলেন, "হে কৃষ্ণ, দয়া করে পুনরায় বৃন্দাবনে আস।" সে জন্য তিনি রথাগ্রে নৃত্য করছিলেন, আপনারা তা বুঝতে পারবেন যদি আপনারা আমাদের সংঘ কর্তৃক প্রকাশিত কিছু গ্রন্থ অধ্যয়ন করেন। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর শিক্ষা নামে একটি গ্রন্থ রয়েছে। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি গ্রন্থ। আপনারা যদি এই কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ সম্পর্কে জানতে চান, তাহলে আমাদের অনেক গ্রন্থ রয়েছে। আপনারা বৈজ্ঞানিক এবং দার্শনিক ভাবে এগুলো অধ্যয়ন বা চর্চা করতে পারেন। কিন্তু আপনার যদি পড়ার আগ্রহ না থাকে, যদি আপনি শুধু মাত্র এই হরে কৃষ্ণ জপ করেন, ধীরে ধীরে সব কিছু আপনার নিকট প্রকাশিত হবে, এবং আপনি শ্রীকৃষ্ণের সাথে আপনার সম্পর্ক উপলব্ধি করতে পারবেন।

অসংখ্য ধন্যবাদ এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার জন্য। এখন আমরা হরে কৃষ্ণ কীর্তন করে জগন্নাথ স্বামীকে নিয়ে এগিয়ে যাব। হরে কৃষ্ণ।