BN/Prabhupada 0093 - ভগবদগীতা হচ্ছে কৃষ্ণ স্বংয়



Lecture on Brahma-samhita, Lecture -- Bombay, January 3, 1973

সুতরাং শ্রীমদ্ভাগবত হচ্ছে বেদান্তসূত্রের মূল ভাষ্য। বেদান্ত সুত্রের মধ্যে, বেদান্ত সুত্রের ব্যাখ্যাতে শ্রীমদ্ভাগবতমে বলা হয়েছে,

জন্মাদ্যস্য যতঃ অন্বয়াৎ ইতরতঃ চ অর্থেষু অভিজ্ঞঃ
তেনে ব্রহ্মা হৃদা য আদি-কবয়ে মুহ্যন্তি যৎ সূরয়ঃ
(শ্রী.ভা. ১.১.১)

এই বর্ণনাগুলো সেখানে আছে। তাই আদি-কবি, আদি-কবি মানে ব্রহ্মা। ব্রহ্মা আদি কবি। তাই তেনে ব্রহ্ম। ব্রহ্মা মানে শব্দ-ব্রহ্মন, বৈদিক শাস্ত্রসমূহ। তাই তিনি (শ্রীকৃষ্ণ) ব্রহ্মার হৃদয়ে নির্দেশ প্রদান করেন। কারণ যখন সৃষ্টির রচনা হয়েছিল অর্থাৎ সৃষ্টির প্রারম্ভে ব্রহ্মাই ছিলেন একমাত্র জীব। তাই প্রশ্ন হতে পারে "ব্রহ্মা কিভাবে বৈদিক জ্ঞান প্রাপ্ত হলেন?" এখানে বিস্তারিত বর্ননা আছেঃ তেনে ব্রহ্মা... ব্রহ্মা। ব্রহ্মার অর্থ হচ্ছে বৈদিক শাস্ত্র। শব্দ-ব্রহ্ম। ভগবদ্‌জ্ঞান বা ভগবানের বিবরণও ব্রহ্ম। ব্রহ্ম হচ্ছে পরম। তাই ব্রহ্ম আর ব্রহ্মের বর্ণনা সমন্বিত সাহিত্যের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। একই জিনিসঃ যেমন ভগবদ্গীতা আর শ্রীকৃষ্ণের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। ভগবদ্গীতাও হচ্ছে শ্রীকৃষ্ণ। অন্যথায় কেন এই বইটি পূজা করা হয়, কেননা, এত দীর্ঘ সময় ধরে, পাঁচ হাজার বছর ধরে, ভগবদ্গীতা যদি শ্রীকৃষ্ণ না হত? এত সাহিত্য, বই, আজকাল প্রকাশিত হচ্ছে। এক বছর, দুই বছর কিংবা তিন বছর পর - এটা শেষ, কেউ আর এটার পরোয়া করে না। কেউ খবর রাখে না, কেউ এটা পড়ে না... পৃথিবীর ইতিহাসে যে কোন সাহিত্যের কথাই আপনি ধরুন, কোন সাহিত্যই পাঁচ হাজার বছর ধরে বিদ্যমান থাকতে পারেনি, বারংবার বহুজনের দ্বারা পঠিত হচ্ছে, অনেক পণ্ডিত, ধর্মবিশ্বাসী এবং দার্শনিক, সব। কেন? কারণ এটি শ্রীকৃষ্ণ। কৃষ্ণ... ভগবদ্গীতা এবং ভগবানের মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই। শব্দ-ব্রহ্ম। সুতরাং ভগবদ্গীতাকে সাধারণ সাহিত্য বলে গ্রহণ করা উচিত নয়। যে কেউ এটিকে তথাকথিত অ,আ,ক,খ জ্ঞান দ্বারা মন্তব্য করতে পারে না। এটা সম্ভব নয়। মূর্খ আর বদমাশরা, তারা তাদের অ,আ,ক,খ জ্ঞানের পাণ্ডিত্য দ্বারা ভগবদ্গীতার উপর মন্তব্য করার চেষ্টা করে। সেটা সম্ভব না। এটি শব্দ-ব্রহ্ম। এটি সেই ব্যক্তির কাছে প্রকাশিত হয় যার শ্রীকৃষ্ণের প্রতি ভক্তি আছে । যস্য দেবে পরা ভক্তির্যথা দেবে... এগুলো বৈদিক নির্দেশাবলী।

যস্য দেবে পরা ভক্তির্যথা
দেবে তথা গুরৌ
তসৈতে কথিতা হ্যর্থাঃ
প্রকাশন্তে মহাত্মনঃ
(শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ ৬.২৩)।

তারা প্রকাশিত হয়ে যায়। এইজন্য বৈদিক সাহিত্যকে প্রকাশিত বলা হয়। এটা এমন নয় যে আমি তোমার অ,আ,ক,খ জ্ঞানের দ্বারা তা বুঝতে পারবো ; আমি একটি ভগবদ্গী‌তা ক্রয় করতে পারি, কারণ আমার ব্যাকরণগত জ্ঞান আছে, আমি বুঝতে পারব। না। বেদেষু দুর্লভ। ব্রহ্ম সংহিতাতে এ কথা বলা হয়েছে যে, বেদেষু দুর্লভ। তুমি তোমার পুঁথিগত বিদ্যার জোরে কিংবা পাণ্ডিত্য দিয়ে সমস্ত বৈদিক সাহিত্য অধ্যয়ন করতে থাক - দুর্ল্ভ। এটি সম্ভব নয়। বেদেষু দুর্ল্ভ। অতএব অনেক লোক আছে, তারা তাদের তথাকথিত পাণ্ডিত্য দিয়ে ভগবদ্গী‌তার ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছে, কিন্তু কেউ তাদের পরোয়া করে না। তারা এমনকি একজন ব্যক্তিকেও, কৃষ্ণ-ভক্ত রূপে তৈরী করতে পারেনি। এটি একটি চ্যালেঞ্জ। তোমাদের বোম্বেতে অনেক লোক আছে যারা অনেক বছর ধরে ভগবদ্গীতা ব্যাখ্যা করছে, কিন্তু তারা একজন ব্যক্তিকেও শ্রীকৃষ্ণের শুদ্ধভক্ত বানাতে পারেনি। এটা আমাদের চ্যালেঞ্জ। কিন্তু এই ভগবদ্গী‌তা, এখন এটি যথাযথ ভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে, এবং হাজার হাজার ইউরোপিয়ান এবং আমেরিকানরা, যাদের পূর্বপুরুষগণ কিংবা পরিবারের কেউ কখনও শ্রীকৃষ্ণের নামও জানত না, তারা ভক্ত হয়ে যাচ্ছে। এটি হচ্ছে সফলতার গোপন রহস্য। কিন্তু এই মূর্খ মানুষগুলো তা জানেন না। তারা মনে করে যে, তাদের তথাকথিত কুসংস্কারাচ্ছন্ন জ্ঞান দ্বারা ভগবদ্গী‌তাকে ব্যাখ্যা করে তারা ভগবদ্গী‌তা প্রকাশ করতে পারে। সেটা সম্ভব না । নাহং প্রকাশঃ যোগমায়াসমাবৃতঃ। শ্রীকৃষ্ণ এইসব মূর্খ আর বদমাশদের কাছে প্রকাশিত হন না। শ্রীকৃষ্ণ কখনও প্রকাশিত হন না। নাহং প্রকাশ সর্বস্য (ভগবদ্গীতা ৭.২৫) তিনি এত সস্তা জিনিস নন যে তিনি এই সমস্ত মূর্খ এবং বদমাশদের দ্বারা উপলব্ধ হবেন। এটা সম্ভব নয়। শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, নাহং প্রকাশ সর্বস্য যোগমায়া সমা ...(ভগবদ্গীতা ৭.২৫)

মনুষ্যাণাং সহস্রেষু
কশ্চিদ্‌ যততি সিদ্ধয়ে
যততামপি সিদ্ধানাং
কশ্চিন্মাং বেত্তি তত্ত্বতঃ
(ভগবদ্গীতা৭.৩)