BN/Prabhupada 0109 - আমরা কোন অলস মানুষকে অনুমোদন করি না



Lecture on SB 1.7.24 -- Vrndavana, September 21, 1976

তুমি খুব সুন্দরভাবে তোমার দায়িত্ব পালন করছ। তোমার ধর্ম মানে তোমার পেশাগত দায়িত্ব। ধর তুমি ইঞ্জিনিয়ার। তুমি খুব ভালভাবে দায়িত্ব পালন করছ। অথবা একজন চিকিৎসক কিংবা একজন ব্যবসায়ী, বা যে কেউ - প্রত্যেকেরই কিছু না কিছু করতে হয়। তুমি অলসভাবে বসে থাকবে আর তোমার জীবিকা পেয়ে যাবে, তা হয় না। এমনকি যদি তুমি একটি সিংহও হও, তোমাকে কাজ করতে হবে। ন হি সুপ্তস্য সিংহস্য প্রবিস্যন্তি মুখে মৃঘা। এই ... জড় জগতটি এইরকম। এমনকি যদি তুমি সিংহের মত শক্তিশালীও হও, তবু তুমি ঘুমাতে পারবে না। তুমি যদি মনে কর, "আমি সিংহ, আমি বনের রাজা। আমি ঘুমাবো আর পশুরা এসে আমার মুখে প্রবেশ করবে।" না, এটা সম্ভব নয়। এমনকি তুমি যদি পশু হও, তোমাকে অন্য একটি পশু ধরতে হবে, তবেই তুমি খেতে পারবে। অন্যথায় তোমাকে উপোস থাকতে হবে। তাই শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, নিয়তং কুরু কর্ম ত্বং কর্ম জ্যায়ো হ্যকর্মণঃ (ভগবদ গীতা 3.8)। "তোমাকে অবশ্যই তোমার কর্তব্য সম্পাদন করতে হবে।" শরীরযাত্রাপি চ তে ন প্রসিদ্ধেদকর্মণঃ। মনে করবে না ... বদমাশরা বলে যে "কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলন মানুষকে শিক্ষা দিচ্ছে কিভাবে কাজ থেকে পালিয়ে বাঁচা যায়। তারা হয়ে গেছে ..." না, এটা শ্রীকৃষ্ণের নির্দেশ নয়। আমরা কোন অলস মানুষকে অনুমোদন করি না। তাকে অবশ্যই কর্মে নিযুক্ত থাকতে হবে। এটাই কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলন। এটাই শ্রীকৃষ্ণের আদেশ। নিয়তং কুরু কর্ম। অর্জুন যুদ্ধ করতে অস্বীকার করছিলেন, তিনি অহিংস জীবনযাপন করতে চেষ্টা করছিলেন। শ্রীকৃষ্ণ তাঁকে অনুমতি দেন নি। "না, না, তুমি এটি করতে পার না। এটা তোমার দুর্বলতা।" কুতস্ ত্বা কশ্মলম ইদং বিষমে সমুপস্থিতমঃ (ভগবদ গীতা 2.2) "তুমি নিজেকে বদমাশ প্রমাণ করছ। অনার্য্য জুষ্টম। এই ধরনের প্রস্তাব অনার্য্য, অসভ্য মানুষদের জন্য। এটি করবে না।" এটা কৃষ্ণের... সুতরাং এইরকম চিন্তা করবে না যে, কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলন, যারা কৃষ্ণভাবনায় আছে, তারা অলস হয়ে যাবে আর হরিদাস ঠাকুরের অনুকরণ করবে। এটি কৃষ্ণভাবনামৃত নয়। কৃষ্ণভাবনামৃত মানে, যেভাবে শ্রীকৃষ্ণ নির্দেশ দিয়েছেন, তোমাকে অবশ্যই খুব, খুব ব্যস্ত থাকতে হবে, চব্বিশ ঘন্টা। এটিই কৃষ্ণভাবনামৃত। একটি অলস কর্মী হয়ো না, শুধু খাবে আর ঘুমাবে, না।

তাই এটি হচ্ছে ধর্মস্য গ্লানিঃ। কিন্তু তোমাকে তোমার দৃষ্টিকোণ পরিবর্তন করতে হবে। এই জড়জগতে তোমার জীবনের লক্ষ্য হচ্ছে কিভাবে নিজের ইন্দ্রিয়তৃপ্তি সাধন করা যায়। আর কৃষ্ণভাবনামৃত মানে হচ্ছে তোমাকে সেই একই উৎসাহ নিয়ে কাজ করতে হবে। একই শক্তিতে, কিন্তু তোমাকে কৃষ্ণকে সন্তুষ্ট করতে হবে। এটিই আধ্যাত্মিক জীবন। এরকম নয় যে অলস ব্যক্তি হবে। পার্থক্য হচ্ছে, চৈতন্য চরিতামৃতের রচয়িতা শ্রীল কৃষ্ণদাস কবিরাজ গোস্বামী যেমন বলেছেন, আত্মেন্দ্রিয় প্রীতি বাঞ্ছা তারে বলি 'কাম' (চৈ.চ.আদি. ৪.১৬৫) কাম কি? কাম মানে যখন একজন নিজের ইন্দ্রিয় তৃপ্তি সাধনের ইচ্ছে করে, সেটিই কাম। কৃষ্ণেন্দ্রিয় প্রীতি ইচ্ছা ধরে 'প্রেম' নাম। আর প্রেম কি? প্রেম মানে যখন তুমি শ্রীকৃষ্ণের ইন্দ্রিয়ের সন্তুষ্টি বিধানের কাজে নিযুক্ত থাকবে। কেন গোপীরা এত মহান? কারণ তাদের একমাত্র প্রচেষ্টা ছিল শ্রীকৃষ্ণের ইন্দ্রিয়ের সন্তুষ্টি বিধান করা। তাই শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু বলেছেন, রম্যা কাচিদুপাসনা ব্রজবধূবর্গেণ যা কল্পিতা। তাঁদের আর কোন কাজ ছিল না। বৃন্দাবন মানে, যারা বৃন্দাবনে আছেন... যদি তারা প্রকৃতই বৃন্দাবনে বাস করতে চান, তাহলে তাদের কাজ হওয়া উচিত কিভাবে শ্রীকৃষ্ণের ইন্দ্রিয়ের সন্তুষ্টি বিধান করা যায়। সেটিই বৃন্দাবন। এইরকম নয় যে "আমি বৃন্দাবনে বসবাস করবো আর আমার নিজের ইন্দ্রিয়ের সন্তুষ্টি বিধানের চেষ্টা করবো।" এটি বৃন্দাবনবাসী হওয়া নয়। এই ধরনের বসবাস হচ্ছে... সেখানে অনেক বানর, কুকুর এবং শূকরও আছে; তারাও বৃন্দাবনে রয়েছে। তুমি কি বোঝাতে চাচ্ছ যে তারা বৃন্দাবনে বসবাস করছে? না। যে বৃন্দাবনে গিয়ে নিজের ইন্দ্রিয়ের সন্তুষ্টি বিধান করতে চায়, তার পরবর্তী জীবন হবে কুকুর, শূকর আর বানরের। তোমাকে এটি অবশ্যই জানাতে হবে, তাই বৃন্দাবনে নিজের ইন্দ্রিয় তৃপ্তি করার চেষ্টা করা উচিত নয়। এটি একটি মহাপাপ। কেবল শ্রীকৃষ্ণের ইন্দ্রিয় সন্তুষ্ট করার চেষ্টা কর।