BN/Prabhupada 0326 - ভগবান হচ্ছেন পরম পিতা, সর্ব্বোচ্চ মালিক, পরম বন্ধু



Lecture on BG 2.13 -- Pittsburgh, September 8, 1972

আত্মা কীভাবে দেহান্তরিত হয়? ধরুন এই জীবনের পরে আমি একটা খুব ভালো জীবন পেয়েছি, এটা খুব ভালো কিন্তু যদি আমি একটি নিকৃষ্ট জীবন লাভ করি। তখন কী পরিস্থিতি হবে? ধরুন পরবর্তী জীবনে আমি বিড়াল বা কুকুর বা গাভীর দেহ পেলাম। ধরুন আপনি আবার আমেরিকায় জন্মগ্রহণ করলেন। কিন্তু যদি আপনার শরীর বদলে যায় তাহলে আপনার পুরো পরিস্থিতি বদলে যাবে। একটি মানুষ হিসাবে, আপনি রাষ্ট্র থেকে সমস্ত সুরক্ষা পেতেন, কিন্তু যখন আপনি অন্য শরীর লাভ করবেন, গাছ বা পশুর তখন আপনার প্রতি রাষ্ট্রের ব্যবহারটিই বদলে যাবে। পশুকে বধ করার জন্য কসাইখানায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, আর গাছকে কাটা হচ্ছে। কেউ প্রতিবাদ করবে না। সুতরাং এটিই হল জড় শরীরের অবস্থা। কখনও কখনো আমরা উন্নত জীবন লাভ করি, কখনো কখনও আমরা নিকৃষ্ট জীবন লাভ করি। এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। এটা নির্ভর করবে আমার কর্মের উপর। এটা বাস্তবিক। এই জীবনে যদি তুমি খুব শিক্ষিত হও তাহলে তোমার ভবিষ্যত খুব ভালো। যদি তুমি শিক্ষিত না হও তাহলে তোমার ভবিষ্যত উজ্জ্বল নয়। এই ভাবে, জীবনের এই মনুষ্য রূপে আমরা এই জন্ম মৃত্যু চক্রের সমাধান করতে পারি। এবং এটি মনুষ্য জীবনের উদ্দেশ্য। কীভাবে আমরা জীবনের এই জড় পরিস্থিতি জন্ম, মৃত্যু, জড়া, ব্যাধি থেকে বেরিয়ে আসতে পারব। আমাদের এর সমাধান করতে হবে। এবং এই সমাধান টি হলো কৃষ্ণ ভাবনামৃত। যেইমাত্র আমরা কৃষ্ণ ভাবনাময় হব... কৃষ্ণভাবনা মানে কৃষ্ণ পরম ভগবান, তিনি পরম প্রভু, ভগবান। আমরা কৃষ্ণের অভিন্ন অংশ। এটাই কৃষ্ণ ভাবনামৃত। শুধু বুঝতে হবে। যেমন আপনি আপনার বাবা, আপনার ভাই, এবং আপনি নিজেকে বুঝতে পারেন। আপনারা সকলেই কোন না কোন পিতার পুত্র। সুতরাং এটি বুঝতে অসুবিধা নেই। পিতা যেমন সমস্ত পরিবারের পালন করেন, তেমনি পরম প্রভু পরমেশ্বর ভগবান কৃষ্ণ, তাঁর অগনিত পুত্র, জীব এবং তিনি তাদের শরীর এবং পরিবারের পালন করছেন। কঠিন কী? তারপর পরবর্তী কর্তব্য হচ্ছে চেতনাকে বিকশিত করা। যেমন একজন সৎ পুত্র যখন সে বুঝতে পারে যে,"আমার পিতা আমার জন্য এতকিছু করেছে। আমি অবশ্যই এটা পরিশোধ করব, বা কমপক্ষে আমার বাবা আমার জন্য যা করেছেন তার জন্য বাধ্যতা স্বীকার করবো। এই অনুভূতিটাই হলো কৃষ্ণ ভাবনামৃত। কৃষ্ণের প্রতি সচেতন হওয়ার জন্য আমাদের কেবল তিনটি বিষয় বুঝতে হবে:

ভোক্তারং যজ্ঞ তপসাং
সর্ব লোক মহেশ্বরম
সুহৃদং সর্ব ভূতানাম্‌
জ্ঞাত্বা মাং শান্তিমৃচ্ছতি
(ভ.গী ৫.২৯)।

আমরা প্রত্যেকেই খুশি এবং সন্তুষ্ট হওয়ার জন্য চেষ্টা করছি। এটাই হলো অস্তিত্বের জন্য লড়াই। কিন্তু যদি আমরা এই তিনটি নীতি বুঝতে পারি, যে ভগবান হলেন পরম পিতা, ভগবান হলেন পরম মালিক, ভগবান হলেন পরম বন্ধু, এই তিনটি নীতি, যদি আপনি বুঝতে পারেন তাহলে আপনি শীঘ্রই শান্তি ফিরে পাবেন। তৎক্ষণাৎ। আপনি সাহায্য পেতে অনেক বন্ধুদের আহ্বান করছেন। কিন্তু যদি আপনি কৃষ্ণকে নিজের বন্ধু, পরম সখা হিসাবে গ্রহণ করেন, তাহলে আপনার বন্ধুত্বের সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। একই রকম ভাবে যদি আমরা ভগবান কে সর্ব্বোচ্চ মালিক হিসাবে স্বীকার করে নি তাহলে আমাদের সমস্ত সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। কারণ আমরা ভগবানের অন্তর্গত বস্তুর মালিকানা নিয়ে মিথ্যা দাবি করছি, মিথ্যা দাবি করে বলছি যে "এই ভূমি, আমেরিকার এই ভূখণ্ড, আমেরিকানদের অধীন; আফ্রিকার এই ভূমি আফ্রিকানদের অর্ন্তর্গত। "না"। সমস্ত ভূমি ভগবানের অর্ন্তর্গত। আমরা আলাদা আলাদা পোশাকে ভগবানের বিভিন্ন পুত্র। আমরা ভগবানের এই সম্পত্তি ভোগ করার অধিকার পেয়েছি, ভগবান অন্যের অধিকার লঙ্ঘন ছাড়াই! যেমন একটি পরিবারে আমরা অনেক গুলি ভাই একসাথে বাস করছি। পিতা, মাতা যা খেতে দিচ্ছে আমরা তাই খাচ্ছি। আমরা অন্যের থালা টি কেড়ে নিতে পারি না। এটি একটি সভ্য পরিবার নয়। এই ভাবে যদি আমরা ভগবানের প্রতি সচেতন হই, কৃষ্ণের প্রতি সচেতন হই, তখন বিশ্বের সমস্ত সমস্যা- সামাজিক, ধর্মীয়, অর্থনৈতিক উন্নতি, রাজনৈতিক- সমস্ত কিছু সমাধান হয়ে যাবে। এটি বাস্তব সত্য।

তাই আমাদের চেষ্টা করতে হবে কৃষ্ণ ভাবনামৃত আন্দোলন কে বিকশিত করার, মনুষ্য সমাজের লাভের জন্য। আমরা সমস্ত বুদ্ধিমান ব্যক্তি, বিশেষত ছাত্র সমাজ কে অনুরোধ করছি, এই আন্দোলনে যোগদান করতে, বৈজ্ঞানিক ভাবে বোঝার চেষ্টা করতে যে এই আন্দোলনটি কী। আমাদের কাছে অনেক গ্রন্থ আছে, কম সে কম দুই ডজনের বেশী বড় বড় গ্রন্থ। আপনারা এইগুলি পড়ুন, আপনারা এই আন্দোলন টি বোঝার চেষ্টা করুন এবং আমাদের সাথে যোগদান করুন।

অনেক অনেক ধন্যবাদ। হরে কৃষ্ণ। (করতালি)