BN/Prabhupada 0605 - ভগবান বাসুদেবের প্রতি আপনার ভালবাসা বৃদ্ধি করুন, আর কোন জড় দেহ লাভ করতে হবে না।



Lecture on SB 5.5.6 -- Vrndavana, October 28, 1976

কিন্তু, অন্তিম লক্ষ্য হচ্ছে বাসুদেবে... প্রীতিঃ ন যাবন্ ময়ী বাসুদেবে। এটিই হল পরম লক্ষ্য। আপনাকে এই স্তরে আসতে হবে, বাসুদেব সর্বমিতি, সম্পূর্ণরূপে দৃঢ় বিশ্বাস যে, বাসুদেবই আমার জীবন, বাসুদেবই আমার সর্বস্ব। শ্রীকৃষ্ণই আমার জীবন। এবং জীবনের সর্বোচ্চ সিদ্ধি শ্রীবৃন্দাবনেই দেখা যায়, বিশেষ করে গোপীদের দ্বারা। বৃন্দাবনধামে সকলেই, এমনকি বৃক্ষ-লতারাও, এমনকি বালুকা কণাগুলোও শ্রীকৃষ্ণের প্রতি আসক্ত। সেটিই হল বৃন্দাবন। সুতরাং এমনটা নয় যে হঠাৎ করেই আমরা শ্রীবৃন্দাবনধামের প্রতি আসক্তির সর্বোচ্চ স্তর লাভ করতে পারব। কিন্তু তারপরও, যেখানেই আপনি থাকুন না কেন, আমরা যেভাবে প্রচার করছি যদি সেভাবে ভক্তিযোগ পালন করি, এটি সফল হচ্ছে। লোকেরা এটি গ্রহণ করছে। তথাকথিত ম্লেচ্ছ এবং যবনেরাও শ্রীবাসুদেবের শরণ গ্রহণ করছে। শ্রীকৃষ্ণের প্রতি তাদের ভালোবাসা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেটিই স্বাভাবিক। শ্রীচৈতন্য চরিতামৃতে বলা হয়েছে, নিত্যসিদ্ধ কৃষ্ণভক্তি। নিত্যসিদ্ধ। ঠিক যেমন আমি অথবা আপনারা, আমরা সকলেই নিত্য। নিত্য শাশ্বতোহয়ং ন হন্যতে হন্যমানে শরীরে (ভগবদ্গীতা ২.২০) দেহের বিনাশের সঙ্গে আমাদের বিনাশ হয় না। আমরা থেকে যাই, নিত্যকালের জন্য। ঠিক একইভাবে শ্রীকৃষ্ণের প্রতি আমাদের ভালোবাসা নিত্য। এটি শুধু আবৃত রয়েছে মাত্র। আবিদ্যাত্মানি উপাধিয়মানে। অবিদ্যা। এটি হল অবিদ্যা। আমরা শ্রীকৃষ্ণকে ভুলে যাই, সেটি হল অবিদ্যা। এবং যেই মাত্র আমরা শ্রীকৃষ্ণকে আমাদের জীবন-প্রাণ হিসেবে গ্রহণ করে নিই, সেটিই হল বিদ্যা। আপনারা তা করতে পারেন। যে কেউই তা করতে পারে। তাই শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, সর্ব ধর্মান পরিত্যজ্য মামেকং শরণং ব্রজ (গীতা ১৮.৬৬)। কেন? আর অন্যান্য তথাকথিত সব ধর্মপন্থা হল অবিদ্যা - আপনাদের অজ্ঞানতায় আচ্ছন্ন করে রাখবে। কোন আলো নেই। বৈদিক নির্দেশ হল, "অন্ধকারে থেকো না।" তমসি মা জ্যোতির্গমঃ।

জ্যোতি মানে শ্রীকৃষ্ণকে ভালোবাসা। আর শ্রীকৃষ্ণকে ভালবাসা মানেই হল চিন্ময় জগৎ। সেটি হল জ্যোতি, জ্যোতির্ময় ধাম, স্বপ্রকাশিত। যস্য প্রভা প্রভবতো জগদণ্ডকোটি (ব্রহ্মসংহিতা ৫.৪০)। সেখানে কোন অন্ধকার নেই। ঠিক যেমন সূর্যের প্রকাশে অন্ধকারের কোন প্রশ্নই নেই। এখানে উদাহরণ দেয়া হয়েছে। জ্যোতি কি বস্তু তা আমরা বুঝতে পারি। আমরা দেখি যে সূর্যগ্রহে কোন অন্ধকার নেই। এটি সর্বত্র আলোকদ্ভাসিত। ঠিক তেমনি চিন্ময় জগতেও কোন অন্ধকার নেই। প্রত্যেকেই শুদ্ধসত্ত্ব স্তরে বিরাজিত। শুধু সত্ত্বগুণই নয়, শুদ্ধসত্ত্ব। সত্ত্বং বিশুদ্ধং বাসুদেব-শব্দিতঃ। এই জড় জগতে তিনটি গুণ রয়েছে। সত্ত্বগুণ, রজোগুণ এবং তমগুণ। এগুলোর কোনটিই শুদ্ধ নয়। এগুলো মিশ্র। এবং যেহেতু তাতে মিশ্রণ রয়েছে তাই আমরা অনেক ধরণের বৈচিত্র্য দেখতে পাই। কিন্তু আমাদের সত্ত্বগুণের স্তরে উন্নীত হতে হবে। সেই পন্থাটি হল শ্রবণ। সেটিই হল সর্বশ্রেষ্ঠ পদ্ধতি। শৃন্বতাং স্ব-কথাঃ কৃষ্ণঃ পুণ্য-শ্রবণ-কীর্তনঃ (ভাগবত ১.২.১৭)। যদি আপনি নিয়মিত শ্রীমদ্ভাগবত শ্রবণ করেন... সেই জন্যই আমরা জোর দিচ্ছি। "সর্বদা শ্রবণ করুন, সর্বদা অধ্যয়ণ করুন এবং সর্বদা শ্রবণ করুন।" নিত্যং ভাগবত সেবয়া (ভাগবত ১.২.১৮)। নিত্য। যদি আপনারা সর্বক্ষণ পারেন, ২৪ ঘণ্টা, যদি আপনি শ্রবণ কীর্তন করেন, শ্রবণ মানে কেউ কীর্তন করল বা পাঠ করল অথবা আপনি নিজেই পাঠ বা কীর্তন করে শুনলেন, অথবা আপনার কোন সহকর্মী পাঠ বা কীর্তন করল আর আপনি তা শুনলেন। অথবা তিনি শুনলেন আর আপনি পাঠ করলেন। এই প্রক্রিয়া চলতেই থাকবে। এই হল শ্রবণং কীর্তনং বিষ্ণোঃ। বিষ্ণোঃ (ভাগবত ৭.৫.২৩)। এটি হল ভাগবত। অন্য কোন বাজে কথা, গল্পগুজব নয়। শুধু শ্রবণ-কীর্তন করুন। তাহলে শৃণ্বতাং স্ব-কথাঃ কৃষ্ণ। যদি আপনি নিষ্ঠাসহকারে শ্রবণ-কীর্তন করেন, ঐকান্তিকভাবে, "হ্যাঁ, আমি আমার এই জীবন শুধু ভগবান শ্রীবাসুদেবের প্রতি ভক্তি বৃদ্ধি করতেই নিযুক্ত করব" যদি আপনারা দৃঢ়প্রত্যয়ী হন, এটি সম্ভব। কোন সমস্যা নেই। আর যেই মুহূর্তে আপনি এটি করবেন, ভগবান বাসুদেবের প্রতি আপনি আপনার ভক্তি বর্ধিত হবে। তাহলে এই জড় শরীরলাভের আর কোন সম্ভাবনা থাকবে না।

জন্ম কর্ম চ মে দিব্যমেব
যো জানাতি তত্ত্বতঃ,
ত্যক্ত্বা দেহং পুনর্জন্ম
নৈতি ...
(গীতা ৪.৯)

একই কথা।

আর যদি আপনি শ্রীকৃষ্ণকে বুঝতে না পারেন, যদি শ্রীকৃষ্ণের প্রতি আপনার প্রেম জাগ্রত করতে না পারেন, তাহলে ন মুচ্যতে দেহযোগেন তাবৎ। কোন সম্ভাবনা নেই। তাদের কোনই সম্ভাবনা নেই। পরবর্তী জীবনে আপনি হয়তো কোন ধনী অথবা ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করতে পারেন কিন্তু সেটিও মুক্তি নয়। আপনার হয়তো আবারো পতন হতে পারে। যেমন আমরা দেখি অনেক... ঠিক যেমন তোমরা মার্কিন যুবকেরা, তোমরা ধনী পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেছ, কিন্তু অধঃপতিত হয়ে হিপি হয়ে গেছ। অধঃপতন। তাই সেই সম্ভাবনাও রয়েছে। এমন নয় যে এটি নিশ্চিত। "যেহেতু আমি ব্রাহ্মণ অথবা ধনীর ঘরে জন্ম নিয়েছি, তাই এটি নিশ্চিত।" না, কোনও নিশ্চয়তা নেই। এই মায়াশক্তি এতোই প্রবল যে এটি শুধু তোমাকে টানতেই চেষ্টা করছে - টেনে নামাচ্ছে, টেনেই নামাচ্ছে। কত কত প্রভাব রয়েছে। সুতরাং কখনও কখনও আমরা দেখতে পাই যে এইসব মার্কিন লোকেরা বেশ ভাগ্যবান যে তারা এমন এক দেশে জন্ম নিয়েছে যেখানে কোন দারিদ্র্য নেই, কোন অভাব নেই। কিন্তু তা সত্ত্বেও যেহেতু নেতারা সব বদমাশ, তারা মাংসাহার, অবৈধ সঙ্গ, নেশা আর জুয়ার ব্যবস্থা করেছে। বিজ্ঞাপন। নগ্ন নারী, গো-খাদক ও মদের বিজ্ঞাপন করছে। এসবই চলছে। ওদের শুধু নীচে টেনে নামাতেই সিগারেটের বিজ্ঞাপন চলছে। নরকে যাও। পুনঃ মুষিকো ভব। তারা এটি বুঝতে পারছে না যে কি একটা সর্বনাশা সভ্যতা তাদের টেনে নামাচ্ছে। সেজন্যই মাঝে মাঝে বয়স্ক লোকেদের মধ্যে কিছু বিবেকী লোক আমার কাছে আসে এবং ধন্যবাদ জানায়ঃ "স্বামীজী, এটি আমাদের মহান সৌভাগ্য যে আপনি আমাদের দেশে এসেছেন"। তাঁরা এটি স্বীকার করেন। হ্যাঁ, এটিই বাস্তব সত্য। এই কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলন একটি মহান সৌভাগ্যের আন্দোলন। বিশেষ করে এই পাশ্চাত্য দেশে। এটিই সত্যি।

তাই যারা এটি গ্রহণ করেছেন, খুব আন্তরিকভাবে এটি নিন। শ্রীকৃষ্ণের প্রতি আপনার ভালবাসা বৃদ্ধি করুন। প্রীতির্ন যাবন্ময়ী বাসুদেবে ন মুচ্যতে দেহ যোগেন ... তারা জানে না যে জীবনের আসল সমস্যাটি কি। জীবনের আসল সমস্যাটি হল দেহযোগ, এই ভিন্ন শরীরটি। আমরা একেক সময়ে একেক রকম শরীর পাচ্ছি, ভূত্বা ভূত্বা প্রলীয়তে (গীতা ৮.১৯) তাই তাদের সেই ইউরোপিয়ান, আমেরিকান সমস্ত মূর্খ বদমাশ নেতারা, তারা সবাই এই সিদ্ধান্ত করেছে যে কোন জন্ম নেই। ব্যাস্। কারণ যদি তারা এটি মেনে নেয় যে মৃত্যুর পরও জন্ম রয়েছে তাহলে সেটি তাদের জন্য খুবই ভয়ানক ব্যাপার। তাই তারা এটিকে খারিজ করে দিয়ে বলে, "না, কোনও পুনর্জন্ম নেই"। কত বড় বড় তথাকথিত অধ্যাপক, শিক্ষিত পণ্ডিতেরা সব মূর্খের মতো বলে যাচ্ছেঃ "স্বামীজী, এই দেহের বিনাশের পর সবকিছুর শেষ।" সেটি হচ্ছে তাদের সিদ্ধান্ত। আর এই দেহ ঘটনাক্রমে লাভ হয়েছে, কিমন্যৎ কামহৈতুকং। অসত্যং অপ্রতিষ্ঠং তে জগদাহুনীশ্বরং (গীতা ১৬.৮)

তাই এই ধরণের সভ্যতা অত্যন্ত বিপদজনক। খুব খুবই ভয়ঙ্কর। তাই অন্তত যারা কৃষ্ণভাবনামৃতে যোগদান করেছে, তাদের অন্তত উচিত এই ধরণের ভয়ঙ্কর বিপদজনক সভ্যতা থেকে সতর্ক থাকা। মানুষেরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। এই কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলন গ্রহণ করুন, সুখী এবং সার্থক হউন।

সবাইকে অনেক ধন্যবাদ।

ভক্তবৃন্দঃ জয় প্রভুপাদ।