BN/Prabhupada 0608 - আমাদেের ভগবৎ সেবা ধৈর্য ও উৎসাহ সহকারে সম্পাদন করতে হবে



The Nectar of Devotion -- Vrndavana, October 20, 1972

শ্রীল নরোত্তম দাস ঠাকুর, একজন মহান আচার্য, তিনি আমাদের শিক্ষা দিচ্ছেন, "যুগল-প্রীতি বা রাধা-কৃষ্ণের প্রেম বোঝার চেষ্টা করো না... তোমার নিজের জল্পনা কল্পনার দ্বারা।" না। সবার প্রথমে আপনাকে ষড়গোস্বামীদের সেবা করতে হবে, রূপ-রঘুনাথ-পদে হইবে আকুতি, তাঁরা কিভাবে নির্দেশ দিচ্ছেন, ঠিক যেমন ভক্তিরসামৃত সিন্ধুতে। শ্রীল রূপ গোস্বামী সবার প্রথমেই শ্রীশ্রীরাধা-কৃষ্ণের প্রীতি শিক্ষা দেন নি। তিনি পাঠকদের সর্বাগ্রে এই শিক্ষা দিচ্ছে যে কি করে সর্বপ্রথমে শুদ্ধ ভক্ত হওয়া যায়।

অন্যাভিলাষিতাশূন্যং
জ্ঞান-কর্মাদি-অনাবৃতং,
আনুকূল্যেন কৃষ্ণানু
শীলনং ভক্তিরুত্তমা
(ভ.র.সি ১.১.১১)

সর্বপ্রথমে তিনি ভক্তদের আদর্শ ভক্তিমূলক সেবার স্তরে আনতে চাইছেন, বিধি মার্গ। তারপর ধীরে ধীরে যখন ভক্ত অভ্যস্ত হয়ে যাবে তখন ক্রমে ক্রমে রাগমার্গ প্রকাশিত হবে। রাগ-মার্গ কৃত্রিম কিছু নয়। এটি স্বয়মেব স্ফুরত্যদ, সেবোন্মুখে হি জিহবাদৌ (ভ.র.সি ১.২.২৩৪) সবকিছুই, শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে ভক্তিমূলক সম্পর্ক আপনি কৃত্রিমভাবে স্থাপন করতে পারেন না। প্রত্যেকেই তার নিজ স্বরূপে শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে একটি নির্দিষ্ট সম্পর্কে সম্পর্কিত। ভগবৎসেবায় অগ্রগতির মাত্রানুযায়ী সেটি ধীরে ধীরে প্রকাশিত হবে শাস্ত্র এবং শ্রীগুরুদেবের নির্দেশানুযায়ী নির্দিষ্ট বিধি বিধান পালনের মাধ্যমে। যখন আপনি যথার্থভাবে প্রশিক্ষণ লাভ করেছেন, আপনি রাগ-মার্গের স্তরে উন্নীত হবেন, তখন আপনার সম্পর্ক... তাকে বলা হয় স্বরূপ-সিদ্ধি। সেই স্তর হচ্ছে স্বরূপসিদ্ধি। সুতরাং স্বরূপসিদ্ধি একটি নির্দিষ্ট স্তরে গিয়ে লাভ হয়। ঠিক যেমন স্বরূপ সিদ্ধি... যৌনজীবনের বাসনা প্রত্যেকটি মানুষের মধ্যেই রয়েছে, কিন্তু যখন একটি ছেলে এবং মেয়ে পরিপক্ক স্তরে আসে, এই বাসনাটি প্রকাশ পেতে থাকে, এটি কেউ কৃত্রিমভাবে শেখে না। ঠিক তেমনি, রাগ-মার্গ, স্বরূপ সিদ্ধি স্তরটি প্রকাশিত হয়, শ্রবণাদি শুদ্ধচিত্তে করয়ে উদয়। উদয়। এই উদয় শব্দটি, ঠিক যেমন সূর্যের মতো। সূর্যোদয় হলে সূর্যকে আপনা থেকেই দেখা যায়। আপনি সূর্যকে মধ্যরাত্রে উদয় হওয়ার জন্য জোর করতে পারেন না। সেটি সম্ভব নয়। সূর্য উঠবেই। আপনাকে শুধু অপেক্ষা করতে হবে। যখন সঠিক সময় হবে, ভোর ৬ টা, তখন আপনি সূর্যকে দেখতে পাবেন।

ঠিক তেমনিই, আমাদেরকে ধৈর্যের সাথে, উৎসাহের সঙ্গে ভগবৎ সেবা সম্পাদন করতে হবে। উৎসাহাৎ ধৈর্যাৎ নিশ্চয়াৎ তৎ-তৎ কর্ম প্রবর্তণাৎ। আমাদেরকে অবশ্যই উৎসাহী হতে যে আমরা... "আমাকে খুব ভালোভাবে কৃষ্ণভাবনামৃতে নিয়োজিত হতে হবে।" সেটি হচ্ছে প্রথম যোগ্যতা, উৎসাহী হওয়া। নিরুৎসাহ ভাব আপনাকে সাহায্য করবে না। আপনাকে অবশ্যই অত্যন্ত উৎসাহী হতে হবে। আমার গুরুমহারাজ বলতেন, "প্রাণ আছে যার, সেই হেতু প্রচার।" একজন ব্যক্তি তখনই প্রচারক হতে পারেন যখন তাঁর মধ্যে প্রাণ রয়েছে। একজন মৃতলোক কখনও প্রচারক হতে পারে না। সুতরাং আপনাকে অবশ্যই অত্যন্ত উৎসাহী হতে হবে যে "আমি আমার সর্বোচ্চ সাধ্য অনুযায়ী ভগবানের মহিমা প্রচার করব।" এটি এমন নয় যে, প্রচারক হতে গেলে কাউকে খুব ভালো পণ্ডিত হতে হবে। এটির জন্য শুধু উৎসাহ প্রয়োজন, "আমার ভগবান এতো মহান, এতো সুন্দর, এতো চমৎকার। সুতরাং আমি অবশ্যই আমার ভগবানের মহিমা সম্পর্কে কিছু না কিছু বলব।" এটি হচ্ছে যোগ্যতা, উৎসাহ। আপনি শ্রীকৃষ্ণকে সম্পূর্ণরূপে হয়তো নাও জানতে পারেন। শ্রীকৃষ্ণকে পরিপূর্ণরূপে জানা সম্ভব নয়। শ্রীকৃষ্ণ অসীম। আমরা শ্রীকৃষ্ণকে শতকরা ১০০ ভাগ জানতে পারি না। টা সম্ভব নয়। কিন্তু আপনি যতটা সম্ভব শ্রীকৃষ্ণকে জানতে পারবেন, তিনি ততটুকুই আপনার কাছে প্রকাশিত হবেন। সুতরাং যদি আমরা শ্রীকৃষ্ণের ঐকান্তিক সেবক হই, উৎসাহান্ এবং যদি ধৈর্যসহকারে সেবা করে যাই, তাহলে শ্রীকৃষ্ণ নিজেকে প্রকাশ করবেন।

এই সম্পর্কে এই উদাহরণটি দেয়া হয়েছে । ঠিক যেমন একটি মেয়ে যখন বিবাহিতা হয়, সাধারনত মেয়েরা একটি সন্তান আশা করে। কিন্তু সে যদি তার বিবাহের সঙ্গে সঙ্গেই সন্তান আশা করে, সেটি সম্ভব নয়। তাকে অবশ্যই অপেক্ষা করতে হবে, সুন্দরভাবে তার স্বামীর সেবা করতে হবে। উৎসাহান্ ধৈর্যাৎ তৎ-তৎ-কর্ম-প্রবর্তনাৎ। ঠিক একটি বিশ্বস্ত স্ত্রীর ন্যায়। সময় আসবে, সে গর্ভবতী হবে এবং তার একটি সন্তান হবে। সুতরাং নিশ্চয়াৎ মানে... ঠিক যেমন একটি মেয়ের এটি অবশ্যই জানা উচিৎ যে যেহেতু সে বিবাহিতা, যেহেতু তার একজন স্বামী রয়েছে, তাহলে নিশ্চয়ই তার একটি সন্তানও হবে। এটিই বাস্তব। হয়তো কিছুটা দেরি হতে পারে। তেমনি, যখন আপনি ভক্তিজীবনে, ভক্তিযোগে, ভক্তিমার্গে প্রবেশ করেছেন, তখন আপনার সাফল্যও নিশ্চিত, এই শর্তে যে আপনি উৎসাহী ও ধৈর্যশীল। এমন নয় যে, "এক্ষুনি আমার সন্তান চাই," "আমি এখুনি পূর্ণ কৃষ্ণভাবনাময় হব আর পূর্ণ সিদ্ধি লাভ করব।"... না। অনেক ভুলভ্রান্তি থাকতে পারে, কারণ আমরা ভ্রমাত্মক একটি পরিবেশে রয়েছি। কিন্তু যদি আপনি ধৈর্যসহকারে, শাস্ত্র অনুযায়ী, ভগবৎ সেবা চালিয়ে যান, এবং গুরুদেবের কাছ থেকে নিশ্চিত হয়ে, তাহলে বাকীটা নিশ্চিত যে আপনি নিশ্চয়ই সাফল্য লাভ করবেন। এই হচ্ছে পন্থা। উৎসাহান্ ধৈর্যাৎ তৎ-তৎ-কর্ম-প্রবর্তনাৎ। আপনাকে অবশ্যই দায়িত্বগুলো পালন করে যেতে হবে।

ঠিক যেমন আমরা আমাদের শিষ্যদের রোজ ১৬ মালা হরিনাম জপ করার নির্দেশ দিয়েছি। ১৬ মালা কিছুই নয়। বৃন্দাবনে এমন অনেক ভক্তরা রয়েছেন যারা ১২০ মালাও জপ করে। ঠিক তেমনি। সুতরাং ১৬ মালা কমপক্ষে। কারণ আমি জানি পাশ্চাত্যদেশে ৬৪ মালা বা ১২০ মালা জপ করা একটি কঠিন কাজ, তাই কমপক্ষে ১৬ মালা। সেটি অবশ্যই সম্পূর্ণ করতে হবে। তৎতৎ-কর্ম-প্রবর্তণাৎ। সেটি হচ্ছে নির্দেশ। বিধিবদ্ধ নিয়মগুলো পালন করা। এইভাবে আমাদেরকে অবশ্যই শ্রীগুরুদেব এবং শাস্ত্র মেনে চলতে হবে। তাহলেই বাকিটা নিশ্চিত। সাফল্য নিশ্চিত।