BN/Prabhupada 0628 - হয়তো, সম্ভবত - এই সমস্ত কথা আমরা গ্রহণ করি না। না। আমরা সত্যিটাকে গ্রহণ করতে চাই



Lecture on BG 2.13 -- Pittsburgh, September 8, 1972

সুতরাং, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যথার্থ জ্ঞানের কথা বলছেন।

দেহিনোহস্মিন্ যথা দেহে
কৌমারং যৌবনং জরা,
তথা দেহান্তরপ্রাপ্তি
র্ধীরস্তত্র ন মুহ্যতি
(ভগবদ্গীতা ২.১৩)

দেহিনঃ, আত্মাকে আশ্রয় করে থাকা দেহটি পরিবর্তিত হচ্ছে। একইভাবে, মৃত্যুর পর, তথাকথিত মৃত্যুর পরে, কারণ আসলে মৃত্যু বলে কিছু নেই। এই স্থুল দেহের ক্রিয়াকাণ্ড বন্ধ হয়ে যাবার পর, আত্মা আরেকটি স্থুল দেহে দেহান্তরিত হয়। এই উক্তিটি আমরা ভগবদ্গীতা থেকে পাই। আর আমরা যদি এই বাক্যটিকে এইভাবে গ্রহণ করি যে, "এটিই সত্যি", তাহলে তৎক্ষণাৎ আমাদের পারমার্থিক জীবন শুরু হয়ে যাবে। এই কথাটি বোঝা ছাড়া কোন রকম পারমার্থিক জ্ঞানের প্রশ্নই আসে না। সবকিছুই অস্পষ্ট, মানসিক জল্পনা-কল্পনা মাত্র, "সম্ভবত" "হতে পারে"... তথাকথিত বৈজ্ঞানিক এবং দার্শনিকেরাই এই সমস্ত দর্শনের কথা বলে। কিন্তু "হতে পারে" , "সম্ভবত" "হয়তো" - এই ধরণের কথা আমরা গ্রাহ্য করি না। আমরা বাস্তব সত্যিটাকে গ্রহণ করি। এটি কোন বিশ্বাসের প্রশ্ন নয়, এটি বাস্তব সত্য। সুতরাং এটিই সত্য।

তাহলে, এখন এই আত্মা কিভাবে দেহান্তরিত হচ্ছে? ধরা যাক, এই জীবনের পর আমি আরেকটি উন্নত জীবন পেলাম, খুব ভাল কথা। কিন্তু যদি আমি নিম্নতর কোন জীবন পাই, তাহলে অবস্থাটা কি হবে? ধরা যাক, পরবর্তী জন্মে আমি একটি বেড়াল বা কুকুর বা গাভীর জীবন পেলাম। ধরে নাও, তোমরা আবার আমেরিকাতেই জন্ম গ্রহণ করলে। কিন্তু যেই না তোমার দেহের পরিবর্তন হচ্ছে, সাথে সাথে সম্পূর্ণ অবস্থাটাও পাল্টে যাচ্ছে। মানুষ হিসেবে রাষ্ট্র তোমাদের সব ধরণের সুরক্ষা দিচ্ছে। কিন্তু যেই মাত্র তুমি অন্য একটি দেহ পেলে, গাছ বা কোন পশু, সেই অনুযায়ী ব্যবহারটিও বদলে যাবে। পশুদের কসাইখানায় পাঠানো হয়, আর গাছগুলো কেটে ফেলা হয়। এর কোনও প্রতিবাদও নেই। সুতরাং এই হচ্ছে জাগতিক জীবনের অবস্থা। কখনও আমরা উন্নতমানের জীবন পাচ্ছি, কখনও বা নিম্ন মানের জীবন কাটাচ্ছি। কোনও নিশ্চয়তা নেই। তা আমার কর্মের ওপর নির্ভর করছে। সেটিই বাস্তব। এই জীবনেও, যদি তুমি শিক্ষিত হও, তাহলে তোমার ভবিষ্যৎটি সুন্দর। আর যদি তুমি শিক্ষিত না হও, তাহলে তোমার ভবিষ্যৎ ততটা উজ্জ্বল নয়। ঠিক একইভাবে, এই মানব জন্মেই আমরা এই পুনরাবর্তনশীল জন্ম-মৃত্যুর চক্রের সমাধান করতে পারি। আর সেটিই হচ্ছে এই মানব জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য, কিভাবে এই জড় বদ্ধ দশা থেকে মুক্তিলাভ করা যায়ঃ জন্ম, মৃত্যু, জরা এবং ব্যাধি। আমরা সমাধান করতে পারি, আর সেই সমাধান হচ্ছে কৃষ্ণভাবনামৃত। আমরা যেই মূহুর্তে কৃষ্ণভাবনাময় হব... কৃষ্ণভাবনাময় হওয়া মানে শ্রীকৃষ্ণ, পরমেশ্বর ভগবান। আমরা শ্রীকৃষ্ণের বিভিন্ন অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটিই হচ্ছে কৃষ্ণভাবনামৃত। শুধুমাত্র এই কথাটি বোঝার জন্যই... ঠিক যেমন তুমি এটি বুঝতে পারো যে তোমার পিতা, তোমার ভাইয়েরা এবং তুমি। তোমরা সবাই পিতার সন্তান হিসেবে ভাই। এটি বুঝতে কোনই সমস্যা নেই। ঠিক যেমন পিতা সম্পূর্ণ পরিবারটির ভরণপোষণ করেন, তেমনই পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ... তাঁরও অসংখ্য সন্তান রয়েছে, সমস্ত জীবেরা, এবং তিনি এইভাবে সমস্ত দেহটিকে, সমস্ত পরিবারটিকে চালাচ্ছেন। এটি বুঝতে কি সমস্যা? এরপর পরবর্তী কাজটি হচ্ছে চেতনার উন্নয়ন। ঠিক যেমন একজন সুসন্তান। যখন সে বুঝতে পারে যে "আমার বাবা আমার জন্য অনেক কিছু করেছেন"। আমাকে অবশ্যই তা পরিশোধ করতে হবে, অথবা কমপক্ষে আমার পিতা আমার জন্য যতকিছু করেছেন তার জন্য আমাকে তাঁর কাছে বাধ্য হয়ে থাকতে হবে।" শুধুমাত্র এইটুকু চেতনাই হল কৃষ্ণ ভাবনামৃত।