BN/Prabhupada 0636 - যারা প্রকৃত জ্ঞানী তারা কখনও এই ধরণের পার্থক্য করেন না যে এদের কোনও আত্মা নেই



Lecture on BG 2.30 -- London, August 31, 1973

অতএব এই দেহটি যদিও সেই একই উৎস থেকে উৎপন্ন, তা সত্ত্বেও তা নিকৃষ্ট। সুতরাং যখন দেহী বা চিন্ময় আত্মা যদিও তা জড়া প্রকৃতি থেকে উৎকৃষ্ট, কিন্তু তারপরও, যেহেতু সে এই জড়া প্রকৃতিতে আবদ্ধ হয়ে আছে, তাই সে শ্রীকৃষ্ণকে ভুলে রয়েছে। এই হচ্ছে পন্থা। কিন্তু ঠিক যেমনটা এখানে বলা হয়েছে, দেহে সর্বস্য, সর্বস্য দেহে, একই আত্মা সর্বত্র রয়েছে। সুতরাং যারা মূর্খ নয়, যারা বুদ্ধিমান এবং পূর্ণজ্ঞানে অবস্থিত, তাঁরা মানুষ এবং পশুর মাঝে কোনও পার্থক্য দেখেন না। পণ্ডিতাঃ সমদর্শিনঃ। যেহেতু তিনি পণ্ডিত, তিনি জ্ঞানী, তাই তিনি জানেন যে সেই দেহেও আত্মা বিরাজমান। বিদ্যাবিনয়সম্পন্নে ব্রাহ্মণে (গীতা ৫.১৮)। সর্বশ্রেষ্ঠ ব্রাহ্মণের মধ্যেও সেই একই আত্মা বিরাজমান । বিদ্যাবিনয়-সম্পন্নে ব্রাহ্মণে গবি; গাভীর মধ্যেও, হস্তিনি; হাতির মধ্যেও 'শুনি' - 'শুনি' মানে কুকুর, 'চণ্ডাল' - সবচাইতে নিম্ন স্তরের মানুষ। সর্বত্রই আত্মা বিরাজমান। এমন নয় যে শুধু মানুষের ভেতরেই আত্মা রয়েছে বা উন্নত স্তরের দেবতাদের ভেতরে আত্মা রয়েছে, আর হতভাগা পশুদের ভেতরে কোন আত্মা নেই। না... সকলের ভেতরেই আত্মা রয়েছে। দেহে সর্বস্য ভারত। সুতরাং আমরা কার কথা গ্রহণ করব? ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা না কি কিছু গণ্ডমূর্খ দার্শনিক অথবা কিছু তথাকথিত ধর্মবাদীদের কথা? আমরা কাকে গ্রহণ করব? আমাদের শ্রীকৃষ্ণের কথাকেই গ্রহণ করতে হবে, যিনি হলেন চূড়ান্ত কর্তৃপক্ষ, পরমপুরুষ। তিনি বলেছেন, সর্বস্য। অনেক জায়গাতেই শ্রীকৃষ্ণ এই কথা বলেছেন। সুতরাং যারা জ্ঞানী তাঁরা কখনও এই ধরণের পার্থক্য করেন না যে এদের কোন আত্মা নেই। প্রত্যেকের ভেতরেই আত্মা রয়েছে। তস্মাৎ সর্বানি ভূতানি। তিনি আবারও বলছেন, সর্বানি ভূতানি। ন ত্বং শোচিতুং অর্হসি। এটি তোমার কর্তব্য। শ্রীকৃষ্ণ বারংবার এই একটি কথাতেই জোর দিচ্ছেন যে আত্মা শাশ্বত, একে কখনও হত্যা করা যায় না। দেহটি অনেক ভাবেই ধ্বংসশীল। "তাই এখন তোমার কর্তব্য যুদ্ধ করা। দেহটিকে হত্যা করা যায়, দেহটিকে ধ্বংস করা যায়। কিন্তু ন হন্যতে হন্যমানে শরীরে (গীতা ২.২০)। কিন্তু এমন কি এই দেহের বিনাশের পরও আত্মা নিত্যকাল থেকে যায়। আত্মা আরেকটি দেহ ধারণ করে, ব্যাস। "তথা দেহান্তরপ্রাপ্তিঃ (গীতা ২.১৩)। দেহান্তর প্রাপ্তিঃ তোমাকে অবশ্যই আরেকটি দেহ ধারণ করতে হবে। আর সেই কথা পরবর্তী শ্লোকে ব্যাখ্যা করা হবে।

একজন ক্ষত্রিয় যোদ্ধার জন্য, ধর্মযুদ্ধে... যুদ্ধকে অবশ্যই ধর্মযুদ্ধ হতে হবে। যুদ্ধের কারণটি অবশ্যই ন্যায়সঙ্গত হতে হবে। তাহলেই কেবল যুদ্ধ করা ঠিক আছে। সুতরাং একজন ক্ষত্রিয় যখন ধর্মযুদ্ধে হত্যা করেন, সে জন্য তিনি দায়ী হন না। তার জন্য তাকে পাপের ভাগী হতে হয় না। সেটি শাস্ত্রে উল্লেখ রয়েছে। ঠিক যেমন ব্রাহ্মণ। তিনি কোন যজ্ঞে পশু উৎসর্গ করছেন। তার মানে এই নয় যে তিনি হত্যা করছেন। ঠিক তেমনই ক্ষত্রিয় যখন হত্যা করে, তার ফলে তার কোনও পাপ হয় না। যে কথা পরবর্তী শ্লোকে ব্যাখ্যা করা হবে। "সুতরাং এটি তোমার কর্তব্যকর্ম।" "তোমার আত্মীয় বা পিতামহকে হত্যা করছো মনে করে উদ্বিগ্ন হবার কিছু নেই। আমার থেকে এই নিশ্চিত জেনে নাও যে, দেহী অবধ্য, তুমি তাকে হত্যা করতে পারবে না, তিনি শাশ্বত।" এখন, 'দেহে সর্বস্য ভারত'। এই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটি আপনাদের লক্ষ্য করতে হবে যে, প্রত্যেকটি জীবসত্ত্বা, তাদের দেহটি এই আত্মার ওপর ভিত্তি করেই বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়েছে। এই শরীরটি বিশালও হতে পারে আবার অতি ক্ষুদ্রও হতে পারে, সেটি কোনও ব্যাপার নয়। কিন্তু... তাই আত্মার কারণেই এই জড় পদার্থ বা দেহটি বৃদ্ধি পায়। এমন নয় যে জড় পদার্থের সমন্বয়ের ফলে চিন্ময় আত্মাটি প্রাণ পেল বা জীবনীশক্তিটির উদ্ভব হল। এটি একটি বৈজ্ঞানিক দিক। জড় পদার্থ চেতনের ওপর নির্ভরশীল। সেজন্যই একে নিকৃষ্টা বলা হয়েছে। যয়েদং ধার্যতে জগৎ। ধার্যতে, এটি ধারণ করে থাকে। চিন্ময় আত্মা রয়েছে, সেই জন্যই এই বিশাল ব্রহ্মাণ্ডটি সেই আত্মার ওপর নির্ভর করে রয়েছে। হয় পরমাত্মা শ্রীকৃষ্ণ নয়তো ক্ষুদ্র জীবাত্মা। দুধরণের আত্মা রয়েছে। আত্মা এবং পরমাত্মা। ঈশ্বর এবং পরমেশ্বর।