BN/Prabhupada 0637 - শ্রীকৃষ্ণের উপস্থিতি ছাড়া কোনও কিছুরই অস্তিত্ব থাকতে পারে না



Lecture on BG 2.30 -- London, August 31, 1973

সুতরাং শ্রীকৃষ্ণ এই ব্যাপারটি ব্যাখ্যা করেছেন। অপরেয়মিতস্ত্বন্যাং প্রকৃতিং বিদ্ধি মে পরাং, যয়েদং ধার্যতে। জীবভূতাং মহাবাহো যয়েদং ধার্যতে জগৎ। (গীতা ৭.৫) সুতরাং আত্মা ধারণ করে আছে। ভগবদ্গীতাতে সবকিছুই ব্যাখ্যা করা রয়েছে। বিশাল বিশাল সব গ্রহনক্ষত্রগুলো। ওগুলো বাতাসে কেন এইভাবে ওজনশুন্য অবস্থায় ভাসছে? সে কথাও বর্ণনা করা হয়েছে। গামাবিশ্যহম্ ওজসা ধারয়ামি (গীতা ১৫.১৩)। সেটি কেবল বোঝার চেষ্টা করুন। একটি বিশাল ৭৪৭ বিমান পাঁচ শ, ছয় শ লোক নিয়ে ভাসছে। কোনও রকম সমস্যা ছাড়াই সেটি আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে, কিভাবে? কারণ সেখানে চালক বা পাইলট রয়েছে। যন্ত্রটির কারণে নয়। এমনটা ভাববেন না যে, এটি একটি বিশাল যন্ত্র তাই তা ভেসে রয়েছে। না। কারণ তার ভেতরে পাইলট রয়েছে। যন্ত্রও রয়েছে। কিন্তু যন্ত্রটির ভেসে থাকা কিন্তু সেই যন্ত্রগুলোর ব্যবস্থাপনার কারণে ভেসে থাকছে না, ভেসে থাকছে কারণ ওতে পাইলট রয়েছে। এ সম্পর্কে কারও কোন দ্বিমত রয়েছে? যদি পাইলট না থাকে, তাহলে সম্পূর্ণ যন্ত্রটিই তৎক্ষণাৎ ভূপতিত হবে। সঙ্গে সঙ্গে... ঠিক তেমনই ভগবদ্গীতাতে বলা হয়েছে, গামাবিশ্য় অহং ওজসা। শ্রীকৃষ্ণ এই বিশাল সব গ্রহগুলির ভেতরে প্রবেশ করেন। তিনি ভেতরে রয়েছেন... অণ্ডান্তরস্থং পরমাণুচয়ান্তরস্থং। সে কথা ব্রহ্ম সংহিতায় উল্লেখ করা হয়েছে।

একোহপস্য-রচয়িতুং জগদণ্ডকোটিং,
যচ্ছক্তিরস্তি জগদণ্ডচয়াযদনন্তঃ অ
ণ্ডান্তরস্থ-পরমাণুচয়ান্তরস্থং
গোবিন্দম্ আদি পুরুষং তমহং ভজামি।
(ব্রহ্ম সংহিতা ৫.৩৫)

জড় পদার্থের ভেতরে শ্রীকৃষ্ণ প্রবেশ না করা পর্যন্ত কোনও কিছুই সক্রিয় হতে পারে না। অণ্ডান্তরস্থ। তিনি গর্ভোদকশায়ী বিষ্ণুরূপে এই ব্রহ্মাণ্ডের ভেতরে রয়েছেন। সেই জন্যই এই সমস্ত ব্রহ্মাণ্ডগুলির অস্তিত্ব রয়েছে। অণ্ডান্তরস্থ। এবং সেই ব্রহ্মাণ্ডের ভেতরে অসংখ্য বিভিন্ন জড় বস্তু, সত্ত্বা ইত্যাদি রয়েছে। এমন কি এই পরমাণু। শাস্ত্র বলছেন, এমন কি এই পরমাণুর ভেতরেও তিনি পরমাত্মারূপে সকল দেহের অভ্যন্তরেই রয়েছেন। শুধুমাত্র জীবসত্ত্বার দেহের ভেতরেই নয়, এমন কি তিনি পরমাণুর ভেতরেও আছেন। কিছু লোকেরা আজকাল পারমাণবিক শক্তি নিয়ে পড়াশোনা করছে। তবুও তারা এই ব্যাপারে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। ওরা ভাঙ্গছে, তারপর ওটাকে আবার ভাঙ্গছে, তারপর আবার ওটাকেও ভাঙ্গছে।কারণ তারা এটাই বুঝতে পারছে না যে ভগবান রয়েছেন, শ্রীকৃষ্ণ রয়েছেন।

সুতরাং শ্রীকৃষ্ণের উপস্থিতি ছাড়া কোনও কিছুরই অস্তিত্ব নেই। তাই যিনি কৃষ্ণভাবনামৃতে উন্নত হয়েছেন, তিনি সর্বত্র কেবল শ্রীকৃষ্ণকেই দর্শন করেন। বাহ্যিক আবরণটি নয়। কারণ শ্রীকৃষ্ণ ছাড়া কোনও কিছুরই অস্তিত্ব থাকতে পারে না। শ্রীচৈতন্য চরিতামৃতে বলা হয়েছে, "স্থাবর জঙ্গম দেখে, দুই ধরণের বস্তু রয়েছে, সচল এবং অচল। অচল হচ্ছে স্থাবর আর সচল হচ্ছে জঙ্গম। স্থাবর-জঙ্গম। স্থাবর মানে অচল বস্তু। এইভাবে দুধরণের বস্তু রয়েছে। সুতরাং আপনারা এই দুই ধরণের বস্তুই দেখে থাকবেন, কিছু জিনিস সচল আর কিছু অচল। কিন্তু মহাভাগবত যখন সচল এবং অচল উভয়কেই দেখছেন, তিনি সেই সচল বা অচল বস্তুটি দেখছেন না, তিনি সেসবে শ্রীকৃষ্ণ দেখেন। কারণ তিনি জানেন সচল মানে জীবসত্ত্বা। সুতরাং জীবসত্ত্বারাও শ্রীকৃষ্ণেরই শক্তি। আর অচল বস্তু মানে জড় পদার্থ। সেটিও শ্রীকৃষ্ণেরই শক্তি।