BN/Prabhupada 0665 - শ্রীকৃষ্ণের ধাম গোলক বৃন্দাবন হচ্ছে নিজালোকে উদ্ভাসিত



Lecture on BG 6.13-15 -- Los Angeles, February 16, 1969

তমাল কৃষ্ণঃ বরং জড় অস্তিত্বের সমাপ্তির ফলে কেউ চিদাকাশে ভগবানের ধামে প্রবেশ করতে পারে। ভগবদগীতায় ভগবানের ধামের বর্ণনা অত্যন্ত চমৎকার ভাবে দেয়া হয়েছে। সেই স্থান চন্দ্র , সূর্য বা বিদ্যুতের আলোর দ্বারা আলোকিত হয় না।"

শ্রীল প্রভুপাদঃ ভগবদগীতায় তোমরা এই বর্ণনা পাবে... হয়তো দ্বিতীয় অধ্যায়ে, অথবা অন্য কোথাও...

ন তদ ভাসয়তে সূর্য
ন শশাঙ্ক ন পাবকঃ
যদ্ গত্বা ন নিবর্তন্ততে
তদ্ধাম পরমং মম
(গীতা 15.6)

শ্রীকৃষ্ণ বলছেন, "আমার ধাম, তা কেমন... আমার চিন্ময় ধামে কোন সূর্যালোকের প্রয়োজন হয় না, কোন চন্দ্রালোকের দরকার হয় না, কোন বিদ্যুতের দরকার হয় না।" এই ধরণের জায়গা এই পৃথিবীতে কোথাও তুমি খুঁজে পাবে না। তোমাদের স্পুটনিক বা যে কোনও মহাকাশ ভ্রমণ যন্ত্র দিয়ে সব জায়গায় ঘুরে দেখতে পারো এমন কোন জায়গা আছে কি না যেখানে সূর্যালোক বা চন্দ্রালোক নেই। সূর্যালোক এতোই বিশাল বিস্তৃত যে ব্রহ্মাণ্ডের সর্বত্রই তা রয়েছে। এমন জায়গা তুমি কোথায় খুঁজে পাবে? তার মানে এই রকম স্থান এই জড় আকাশের অতীত। সে কথাও বর্ণনা করা হয়েছেঃ পরস্তস্মাৎ তু ভাবোন্যব্যক্তব্যক্তাৎ সনাতনঃ (গীতা ৮.২০) এই জড়া প্রকৃতির ঊর্ধ্বে আরেকটি প্রকৃতি রয়েছে। তাই আমরা এটিই জানি না যে এই জড়া প্রকৃতিটি কি দ্বারা গঠিত তাহলে সেই চিন্ময় প্রকৃতিকে আমরা আর কি-ই বা জানব? অর্থাৎ তোমাকে শ্রীকৃষ্ণের কাছ থেকে শুনতে হবে যিনি ঐ চিন্ময় প্রকৃতিতে বসবাস করেন। অন্যথায় তুমি সারাজীবনই একটা মূর্খ হয়েই থাকবে।

এখানে সেই তথ্য দেয়া হচ্ছে। যেখানে তুমি পৌছাতে পার না, সেখানকার জ্ঞান তুমি কিভাবে লাভ করবে? তোমার ইন্দ্রিয়গুলো এতোটাই ভ্রান্তিপূর্ণ। কিভাবে জানবে তুমি? তোমাকে কেবল শুনতে হবে। ঠিক যেমন তোমাকে তোমার মায়ের থেকে তোমার বাবার সম্পর্কে শুনতে হবে। এ ছাড়া আর কোন উপায় নেই। মা সেটি নিশ্চিত করবেন, "এই হচ্ছে তোমার বাবা, তোমাকে এটি মানতে হবে" তুমি গবেষণা করতে পার না। কোন উপায়েই নয়। ঠিক তেমনই যদি তুমি ভগবান ও তাঁর ধাম সম্পর্কে জানতে চাও তোমাকে প্রামাণিক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে শ্রবণ করতে হবে কোন গবেষণালব্ধ জ্ঞানের প্রশ্নই আসে না। কেবল শ্রবণ করতে হবে। শ্রবণ করা মানে ঠিক যেমন তোমার মায়ের কথায় তুমি কোন একজন ভদ্রলোককে তোমার পিতা হিসেবে মেনে নিয়েছ। কেবল বৈদিক সাহিত্যের মাধ্যমে জানতে হবে, যিনি হচ্ছেন মাতৃতুল্য। প্রামাণিক মাতা। বেদমাতা। একে বলা হয় বেদমাতা। বেদ মানে জ্ঞান। আর তা মায়ের থেকে গ্রহণ করতে হয়। তাই বেদ মাতা থেকে তোমাকে এই জ্ঞান লাভ করতে হবে যে কৃষ্ণ কে? আর এখানে শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং ব্যাখ্যা করছেন। তাই তোমাকে এটি বিশ্বাস করতেই হবে। তাহলেই তুমি জ্ঞানলাভ করবে। এ ছাড়া আর কোন সম্ভাবনা নেই। তুমি গবেষণা করতে পার না। তাহলে তুমি ব্যর্থ হবে। পড়।

তমাল কৃষ্ণঃ জড় আকাশের সূর্যের মতো চিদাকাশে সমস্ত গ্রহগুলি আলোকোজ্জ্বল... "

শ্রীল প্রভুপাদঃ এখানে জড় গ্রহগুলি আলোকোজ্জ্বল নয় তাই এখানে সূর্যের আলোর দরকার পড়ে,কিংবা বিদ্যুৎ, বা চন্দ্র। কিন্তু সেখানে শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং উজ্জ্বল আর তাঁর ধামও প্রভাময়। একটি উদাহরণ হল সূর্য। সূর্য স্বয়ং আলোকোজ্জ্বল একটি গ্রহ। যদি এই জড় জগতেই এইরকম আলোকোজ্জ্বল গ্রহ থাকে তাহলে চিন্ময় জগতের আর কি কথা? সেখানে সমস্ত গ্রহগুলি স্বয়ং আলোকোজ্জ্বল। মণির ন্যায়। যদি তুমি মণি বা হীরে অন্ধকারে রাখ, তা নিজেই আলো দেবে। সেখানে আলাদা করে আলোর দরকার পড়বে না যে "এই দেখ এটি একটি হীরে।" এটি স্বয়ং আলোকোজ্জ্বল। এই জড় জগতেই তুমি এমনটা পাবে। সুতরাং কৃষ্ণের ধাম গোলোক বৃন্দাবনও তেমনই স্বয়ং আলোকোজ্জ্বল। আমরা শ্রীমদ্ভাগবতে সেই স্বয়ং আলোকোজ্জ্বল চিত্রটি দিয়েছি চিদাকাশে এইরকম লক্ষ কোটি গ্রহ রয়েছে। পড়।