BN/Prabhupada 0679 - কৃষ্ণভাবনামৃতে যা কিছুই করা হোক না কেন, তার প্রভাব থাকবেই



Lecture on BG 6.25-29 -- Los Angeles, February 18, 1969

বিষ্ণুজনঃ শ্লোক ২৯, "প্রকৃত যোগী সর্বভূতে আমাকে দর্শন করেন এবং আমাতে সবকিছু দর্শন করেন। যোগযুক্ত আত্মা সর্বত্রই আমাকে দর্শন করেন। (গীতা ৬/২৯)"

শ্রীল প্রভুপাদঃ হ্যাঁ। একজন প্রকৃত যোগী সবকিছুতে আমাকে দর্শন করেন। তিনি কীভাবে দেখেন? ওরা ব্যাখ্যা করে যে সমস্ত জীবই শ্রীকৃষ্ণ। তাই আলাদা করে শ্রীকৃষ্ণকে আরাধনা করার কিছু নেই। তাই তারা মানবকল্যাণমূলক কাজ করে থাকে। তারা বলে এটাই বরং ভাল। শ্রীকৃষ্ণকে কেন পূজা করতে হবে? শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন সবকিছুতেই তাঁকে দর্শন করতে। তাই চল এদের সেবা করা যাক্‌ ... কিন্তু তারা আসলে পদ্ধতিটাই জানে না। সেটির জন্য শ্রীগুরুদেবের অধীনে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। "একজন প্রকৃত যোগী আমাকে সবকিছুতে দর্শন করেন"। একজন সত্যিকারের যোগী, মানে ভক্ত। ঠিক যেমন এই ভক্তরা বাইরে যাচ্ছে কৃষ্ণভাবনামৃত প্রচার করতে। কেন? কারণ তাঁরা সবকিছুতে শ্রীকৃষ্ণকে দর্শন করছে কীভাবে? কারণ তাঁরা সমস্ত জীবকে ভগবানের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলেই দেখছে এরা এখন কৃষ্ণবিস্মৃতিতে রয়েছে। তাই এদের কৃষ্ণভাবনামৃতকে জাগরিত করা যাক। যারা কৃষ্ণভাবনাময় নেই ভক্তরা তাদের দেখছেন ঠিক যেমন কখনও কখনও প্রচারকার্য চলে যে অশিক্ষিত সম্প্রদায়ে শিক্ষাদান করার। কেন? কারণ তারা দেখে যে এরা সবাই মানুষ, তাই এদের শিক্ষা প্রয়োজন। এদের জীবনের মূল্যবোধ বোঝা উচিত। সেটি তাদের সহানুভূতি। এখানেও সেই একই ব্যাপার যে সকলেরি এটি জানা উচিত যে প্রতিটি জীবই হচ্ছে শ্রীকৃষ্ণের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই কথা ভুলে যাওয়াতেই সে দুঃখ পাচ্ছে সেটিই হচ্ছে সর্বভূতে শ্রীকৃষ্ণ দর্শন। এমন নয় যে সবাই কৃষ্ণ হয়ে গেছে। ওভাবে দেখবে না, তাহলে তুমি ভুল পথে পরিচালিত হবে। প্রত্যেকটি জীব ... ঠিক যেমন আমি যদি কাউকে দেখি যে এই ছেলেটি অমুক ভদ্রলোকের সন্তান । তার মানে হচ্ছে আমি ঐ ভদ্র লোকটিকে এই ছেলের মাঝে দেখতে পাচ্ছি? বুঝতে পেরেছ? যদি আমি সমস্ত জীবকে ভগবানের সন্তান বলে দেখি তার মানে হল আমি সমস্ত জীবে শ্রীকৃষ্ণ দর্শন করছি। এটি বুঝতে কোন সমস্যা?

বিষ্ণুজনঃ এটি কি সঙ্গ? না কি দৃষ্টি?

শ্রীল প্রভুপাদঃ না, এটি বাস্তব। (হাসি) এটি সঙ্গ বা দর্শন নয়। এটিই বাস্তব সত্য। যখন তুমি কোন বেড়ালকে দেখ, কুকুরকে দেখ, তুমি তাতে কৃষ্ণ দর্শন করবে। কেন? কারণ তুমি জান যে এই বেড়ালটি একটি জীব। সে তার পূর্বকৃত কর্মের ফল অনুযায়ী, ভগবৎবিস্মৃতির কারণে, এই বেড়াল দেহ পেয়েছে। তাই বেড়ালটিকে সাহায্য করা যাক, অকে কিছু কৃষ্ণপ্রসাদ দেয়া যাক যাতে করে কোনও একদিন সে কৃষ্ণভাবনামৃতে আসবে । এর মানে হচ্ছে তাতে কৃষ্ণদর্শন করা। এমন নয় যে, "ওহ্‌ এইতো শ্রীকৃষ্ণ, একে জড়িয়ে ধরি"। সেটি মূর্খতা। এই তো একটি বাঘ। "ওহ্‌, এইতো শ্রীকৃষ্ণ। দয়া করে আমাকে খাও।" এসব হচ্ছে বদমাশি। তোমার উচিত সমস্ত জীবের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া এই কথা ভেবে যে তারা শ্রীকৃষ্ণের অবিচ্ছেদ্য অংশ। বাঞ্ছাকল্পতরুভ্যশ্চ কৃপাসিন্ধুভ্য এব চ এর অর্থ এই নয় যে, এখন আমি একে আলিঙ্গন করব। "এসো কৃষ্ণ"। সুতরাং "প্রকৃত যোগী সর্বভূতে আমাকে দর্শন করেন।" এটিই হচ্ছে প্রকৃত দর্শন। আমরা কেন এই সব ছেলেমেয়েদের স্বাগত জানাচ্ছি? কারণ এরা শ্রীকৃষ্ণের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তোমরা যতদূর সম্ভব এদের সুযোগ করে দিচ্ছ যেন তারা কীর্তনে অংশ নিতে পারে, প্রসাদ আস্বাদন করতে পারে। যেই বাচ্চারাই এখানে আসছে, এভাবে অনুকরণ করছে, ভেব না যে এই সব ব্যর্থ যাবে। জানতে বা অজান্তে কৃষ্ণভাবনামৃতে যা কিছুই করা হোক না কেন, এর একটা প্রভাব থাকবেই । এইসব বাচ্চারা যারা প্রণাম করছে, বা কৃষ্ণনাম করছে বা হাতে তালি দিচ্ছে, এই সব কিছুই কৃষ্ণভাবনামৃতের ব্যাংক একাউন্টে জমা হচ্ছে। ঠিক যেমন একটি শিশু যদি আগুন স্পর্শ করে, এটা হাত পুড়বেই। আগুন ওকে এই বলে মাফ করবে না যে, "ওহ্‌ এ তো ছোট বাচ্চা। ও কিছু জানে না।" আগুন তার কাজ করবেই। ঠিক একই ভাবে যদি শ্রীকৃষ্ণ পরম চেতন হন যদি একটি শিশুও তাতে অংশ নেয়, শ্রীকৃষ্ণ তার ফল প্রদান করবেন। সে নিজে সেটি জানতেও পারে, নাও জানতে পারে। তাতে কিছু যায় আসে না কারণ এতে শ্রীকৃষ্ণ রয়েছেন। তাই এটি এতোই চমৎকার। তাই প্রতিটি বদ্ধজীবেদের সুযোগ দেয়া উচিত । এই ছেলেরা বাইরের লোকদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছে, "আসুন" এই যে প্রীতিভোজ, এর কারণ কি? কারণ হচ্ছে তাদের আসতে দেয়া হোক, কিছু প্রসাদ নিক্‌; আর তাতেই কোন না কোনদিন তাদের কৃষ্ণভাবনামৃতে কাজে লাগবে। এটি কাজ করবেই। এটিই হচ্ছে তাদের উদ্দেশ্য। তারা সবাইকে দেখছে। শ্রীকৃষ্ণ, তারা এইভাবে সবার মধ্যে শ্রীকৃষ্ণকে দেখছে। এমন নয় যে প্রত্যেকেই শ্রীকৃষ্ণ। সেই ভুলটি কোর না। শ্রীকৃষ্ণ সর্বব্যাপ্ত। কেন কেবল এই মানব শরীরে, তিনি পরমাণুতেও আছেন। অণ্ডান্তরস্থ পরমাণু চয়ান্তরস্থম্‌ (ব্রহ্মসংহিতা ৫/৩৫) এটি তোমরা ব্রহ্মসংহিতায় পাবে। পরমাণু মানে অতীব ক্ষুদ্র। তিনি এমনকি অতীব ক্ষুদ্র পরমাণুতেও আছেন। তাহলে সমস্ত জীবের ভেতরে কেন নন? তোমাদের সেই জ্ঞানটি থাকা উচিত।