BN/Prabhupada 0696 - ভক্তিযোগ মানে অব্যভিচারী প্রেম



Lecture on BG 6.46-47 -- Los Angeles, February 21, 1969

ভক্তঃ বাস্তবিকভাবেই ভক্তিযোগ হচ্ছে চরম লক্ষ্য ভক্তিযোগকে সূক্ষ্মভাবে বোঝার জন্য অন্যান্য ছোট ছোট যোগপন্থাকেও ভাল করে বোঝা দরকার। তাই প্রগতিশীল যোগী চিরন্তন মঙ্গলের পথে আছেন। যখন কেউ যোগপন্থার একটি নির্দিষ্ট জায়গায় এসে থেমে যায়, এবং আর কোন উন্নতি করতে পারে না, তখন তাঁকে সেই স্তরের যোগী বলা হয়।"

শ্রীল প্রভুপাদঃ হ্যাঁ। কেউ যদি জ্ঞানযোগ অভ্যাস করছে, যদি সে ভাবে তাঁর যোগসাধনা শেষ হয়ে গেছে, তাহলে তা ভুল। তাকে আরও অগ্রস্র হতে হবে। যেমনটা আমরা বহুবার সিঁড়ির ধাপের মাধ্যমে উদাহরণ দিয়েছি তোমাকে একদম সর্বোচ্চ তলায় উঠতে হবে, ধর একশ তলায়। কেউ হয়তো পঞ্চাশ তলায় আছে, কেউ ত্রিশ তলায় , কেউ বা আবার আশি তলায় আছে। কেউ যদি পঞ্চাশ বা আশি তলায় এসে মনে করে, 'যাক্‌ আমার কাজ শেষ'। তাহলে তার আর উন্নতি করা হল না। প্রত্যেককে একদম শিখরে পৌঁছুতে হবে। সেটিই যোগের সরররবোচ্চ সিদ্ধি। এই সম্পূর্ণ সিঁড়িকে তুলনা করা যায় যোগ পন্থার মাধ্যমে। যুক্ত করার মাধ্যম। কিন্তু কেবল পঞ্চাশ বা আশি তলায় থেকেই সন্তুষ্ট হয়ে থেক না। সর্বোচ্চ একশ তলায় বা একশ পাঁচ তলায় উঠতে হবে। তার নাম ভক্তি যোগ। পড়ো।

ভক্তঃ কিন্তু কেউ যদি ভক্তিযোগের স্তরে পৌঁছানোর সৌভাগ্য পেতে পারে, তার অর্থ তিনি বাকি সমস্ত যোগ পন্থা সম্পূর্ণ করেই এসেছেন।"

শ্রীল প্রভুপাদঃ এখন কেউ যদি সিঁড়ি ভেঙ্গে যাবার চেয়েও ভাল সুযোগ পায়, তার কাছে লিফটের সুযোগ আছে, নিমেষেই সে সবচেয়ে উঁচুতে পৌঁছে যাবে। এখন কেউ যদি বলে "আমি কেন এই লিফটের সুযোগ নেব? আমি একটা একটা সিঁড়ি ভেঙ্গে যাব।" সে তা করতে পারে, কিন্তু ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে যদি তুমি ভক্তিযোগ গ্রহন কর, তৎক্ষণাৎ তুমি লিফটে উঠে গেলে। এবং কয়েক মুহূর্তেই তুমি একশ তলায় উঠে গেলে। এটি হচ্ছে সরাসরি পন্থা অন্যান্য পন্থা অবলম্বন করে তুমি ধাপে ধাপে যেতে পার। কিন্তু তুমি চাইলে সরাসরিও যেতে পার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু বলেছেন এই যুগে লোকেরা অল্পায়ু। সর্বদা উপদ্রুত, এবং দুশ্চিন্তায় পরিপূর্ণ। তাই তাঁর করুণায়, তাঁর অনুকম্পায় তিনি আমাদের হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্রের মাধ্যমে ভক্তিযোগের সরাসরি পন্থা দিচ্ছেন তৎক্ষণাৎ। তোমাকে অপেক্ষা করতে হবে না। সঙ্গে সঙ্গে তা আমাদের নিয়ে যাবে। এটিই হচ্ছে ভগবান শ্রীচৈতন্য দেবের বিশেষ পুরস্কার। তাই শ্রীল রূপ গোস্বামী ভগবান শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুকে প্রার্থনা করেছেন নমো মহাবদান্যায় কৃষ্ণপ্রেম প্রদায়তে (শ্রীচৈতন্য চরিতামৃত মধ্যলীলা ১৯.৫৩) "হে ভগবান আপনি হচ্ছেন সবচাইতে উদার এবং করুণাময় অবতার কারণ আপনি আমাদের সরাসরি কৃষ্ণপ্রেম প্রদান করছেন। কৃষ্ণপ্রেম লাভের জন্য একজন ব্যক্তিকে অন্যান্য যোগপন্থার স্তরগুলো ধাপে ধাপে যেতে হয়... আর আপনি সেই প্রেম সরাসরি প্রদান করছেন। তাই আপনি সবচাইতে দয়ালু।" এটিই হছে উনার অবস্থান। পড়ো।

ভক্তঃ তাই কৃষ্ণভাবনাময় হওয়াটাই যোগের পরম সিদ্ধি ঠিক যেমন আমরা যখন হিমালয় পর্বতমালার কথা বলি আমরা পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতমালার কথা বলি আর তার মধ্যে সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টের কথা বলি যা চূড়ান্ত সীমা হিসেবে ধরা হয়। অনেক জন্মের সৌভাগ্যের ফলে কেউ কৃষ্ণ ভাবনামৃত বা ভক্তিযোগে আসে। এবং বৈদিক নির্দেশের দ্বারা সে সঠিকভাবে স্থিত থাকে। একজন আদর্শ যোগী তাঁর মনোযোগ শ্রীকৃষ্ণে নিবদ্ধ রাখেন যার আরেক নাম শ্যামসুন্দর, মেঘবর্ণের ন্যায় সুন্দর। তাঁর পদ্মের মতো মুখমণ্ডল সূর্যের ন্যায় উদ্ভাসিত, কর্ণকুণ্ডল ও তাঁর বসন উজ্জ্বল এবং তাঁর শ্রীঅঙ্গ মালায় বিভূষিত। তাঁর সবদিক থেকে তিনি জ্যোতির্ময় যাকে বলা হয় ব্রহ্মজ্যোতি। যেমন রাম, নৃসিংহ, বরাহ আদি বিভিন্ন রূপে তিনি অবতীর্ণ হন এবং শ্রীকৃষ্ণ , পরমেশ্বর ভগবান। তিনি নররূপে অবতীর্ণ হন, মা যশোদার পুত্ররূপে এবং শ্রীকৃষ্ণ, গোবিন্দ, বাসুদেব নামে প্রসিদ্ধ হন। তিনি আদর্শ সন্তান, স্বামী, বন্ধু ও প্রভু। এবং তিনি সমস্ত চিন্ময় গুণাবলীতে বিভূষিত। যদি কেউ ভগবানের এই সমস্ত দিব্য বর্ণনার রূপে মন নিবদ্ধ করে রাখে , তাহলে তাঁকে বলা হয় সর্বোত্তম যোগী। যোগের এই সর্বোত্তম অবস্থা কেবল ভক্তিযোগের মাধ্যমেই লাভ করা যায়। সমস্ত শাস্ত্রে যা নিশ্চিত করা হয়েছে।"

শ্রীল প্রভুপাদঃ ভগবদ্গীতায় এই ভক্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে যে ভক্ত্যা মাম্‌ অভিজানাতি যাবান্‌ যশ্চাস্মি তত্ত্বতঃ (গীতা ১৮/৫৫) প্রথমে ভগবান বলছেন কোটি কোটি লোকের মাঝে একজন কেউ আমাকে তত্ত্বত জানতে পারেন আর সেই তত্ত্বত কথাটি আবার ব্যবহার করা হয়েছে আঠার অধ্যায়ে যে "যদি কেউ আমাকে জানতে চায়", ভগবান বা শ্রীকৃষ্ণকে তাহলে তাঁকে এই ভক্তিযোগের পন্থা আশ্রয় করতে হবে। ভক্ত্যা মাম্‌ অভিজানাতি যাবান্‌ যশ্চাস্মি তত্ত্বতঃ (গীতা ১৮/৫৫) বেদেও এই কথা বলা হয়েছে, কেবল ভক্তির দ্বারা, সেবার দ্বারা পরম সিদ্ধি লাভ করা যায় অন্যান্য যোগ পন্থাতেও ভক্তির স্পর্শ থাকতে হবে কিন্তু ভক্তিযোগে কেবল শুদ্ধা অবিমিশ্র ভক্তির কথা তাই এই সরাসরি ভক্তির পন্থার কথা বলা হচ্ছে, কারণ লোকের কাছে যথেষ্ট সময় নেই অন্যান্য যোগ পন্থার সবকিছু পালন করতে। ধন্যবাদ।