BN/Prabhupada 0752 - বিরহের মধ্য দিয়ে কৃষ্ণ আরও বেশি করে উপস্থিত থাকতে পারেন



Lecture on SB 1.8.39 -- Los Angeles, May 1, 1973

আমাদের সবসময় জপ-কীর্তনে নিয়োজিত থাকতে হবে। হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ, কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে / হরে রাম হরে রাম, রাম রাম হরে হরে। যাতে শ্রীকৃষ্ণ আমাদের রক্ষা করেন। জেনে শুনে আমরা কোন পাপ কর্ম করবো না। এটী একটি বিষয়। অজ্ঞাতসারেও করবো না। তাহলে আমরা দায়ী থাকবো। কাজেই তুমি যদি কৃষ্ণভাবনাময় থাক, যদি সর্বদাই শ্রীকৃষ্ণকে তোমার হৃদয়ে ধারণ করো, তাহলে... ঠিক যেমন যখন সূর্য উপস্থিত থাকে, তখন অন্ধকার সেখানে থাকতে পারে না। একইভাবে, যদি তুমি কৃষ্ণ সূর্যকে ধারণ কর, কৃষ্ণ সূর্য... এটী হচ্ছে ভগবৎ ধামে ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের নীতিবাক্যঃ কৃষ্ণ সূর্য সম মায়া অন্ধকার (চৈচ মধ্য ২২.৩১)। শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন ঠিক উজ্জ্বল সূর্যালোকের মতো, আর মায়া, অজ্ঞানতা হচ্ছে ঠিক অন্ধকারের মতো। কিন্তু যখন অথবা যে সময় অথবা যেখানে সূর্য থাকে, সেখানে কোন অন্ধকার থাকতে পারে না। একইভাবে, তুমি তোমার চেতনায় শ্রীকৃষ্ণকে রাখ, তাহলে সেখানে কোন অজ্ঞানতা থাকতে পারবে না, কোন অন্ধকার থাকতে পারবে না। তুমি খুব স্বাধীনভাবে কৃষ্ণরূপ সূর্যালোকে বিচরণ করতে পারবে। শ্রীকৃষ্ণকে অনুপস্থিত রাখার চেষ্টা করো না। এটী হচ্ছে কুন্তী দেবীর প্রার্থনা। "হে আমার প্রিয় কৃষ্ণ, তুমি দ্বারকায় যাচ্ছ..." এটী একটি উদাহরণ। তাঁরা যাচ্ছেন না। শ্রীকৃষ্ণ পাণ্ডবদের থেকে চলে যাচ্ছেন না। ঠিক যেমন বৃন্দাবনে। যখন শ্রীকৃষ্ণ বৃন্দাবন ছেড়ে মথুরায় গেলেন... শাস্ত্রে এটী বলা হয়েছে যেঃ বৃন্দাবনম্‌ পরিত্যজ্য পদম একম্‌ ন গচ্ছতি (চৈচ অন্ত্য ১.৬৭)। শ্রীকৃষ্ণ বৃন্দাবন ছেড়ে এক পদও বের হন না। তিনি যান না। তিনি বৃন্দাবনের প্রতি খুব আকৃষ্ট। কিন্তু আমরা দেখছি শ্রীকৃষ্ণ বৃন্দাবন ত্যাগ করে মথুরায় গিয়েছেন। তো এটী কিভাবে, তিনি বহুদূর চলে গিয়েছেন? এবং বহু বছর ধরে তিনি ফিরে আসেননি? না। শ্রীকৃষ্ণ প্রকৃতপক্ষে বৃন্দাবন ত্যাগ করেনি। কারণ যখন থেকে শ্রীকৃষ্ণ বৃন্দাবন ছেড়ে ছিলেন , সমস্ত ব্রজবাসী গোপীরা, তাঁরা শুধুমাত্র শ্রীকৃষ্ণের কথা চিন্তা করতো আর কাঁদত। এই যা। এটিই ছিল তাঁদের কাজ। যশোদা মা, নন্দ মহারাজ, রাধারানী, সমস্ত গোপীরা, সমস্ত গাভীরা, সমস্ত বাছুরেরা, সমস্ত রাখাল বালকেরা তাঁদের একমাত্র কাজ ছিল শুধু শ্রীকৃষ্ণের কথা চিন্তা করা আর কান্না করা। অনুপস্থিতি, বিরহ।

তো শ্রীকৃষ্ণ অনুভূত হতে পারেন... শ্রীকৃষ্ণ বিরহের মধ্যে আরো তীব্রভাবে উপস্থিত থাকতে পারেন। এটী হচ্ছে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর শিক্ষাঃ বিরহের মধ্য দিয়ে শ্রীকৃষ্ণকে ভালোবাসা। ঠিক যেমন শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু বিরহে ছিলেনঃ গোবিন্দবিরহেণ মে। শুন্যায়িতং জগৎ সর্বং গোবিন্দবিরহেণ মে (চৈচ অন্ত্য ২০.৩৯, শ্রীশিক্ষা অষ্টকম্‌ ৭)। তিনি চিন্তা করছেন যে "গোবিন্দ ছাড়া সব কিছু শূন্য, কৃষ্ণ ছাড়া।" সব কিছু শূন্য, কিন্তু কৃষ্ণ ভাবনা সেখানে রয়েছে। কৃষ্ণ চেতনা সেখানে রয়েছে। এটীই হচ্ছে চরম সিদ্ধি... যখন আমরা দেখবো যে কোন কিছুই কিছু নয়, শুধু কৃষ্ণ ভাবনাই হচ্ছে সম্পদ... এটিই হচ্ছে সর্বোচ্চ, এই হচ্ছেন গোপীরা। তাই গোপীরা হচ্ছেন মহিমান্বিত। তাঁরা এক মুহূর্তের জন্যও শ্রীকৃষ্ণকে ভুলতে পারতেন না। এক মুহূর্তের জন্যও না। শ্রীকৃষ্ণ তাঁর গরু বাছুরদের নিয়ে বনে যেতেন। আর গোপীরা গৃহ মধ্যে মনকষ্টে থাকতেন, "ওহ্‌, কৃষ্ণ খালি পায়ে হাঁটছে। সেখানে অনেক পাথর আর কাঁটা রয়েছে। সেগুলো শ্রীকৃষ্ণের কোমল পাদপদ্মে আঘাত করছে। শ্রীকৃষ্ণ যখন তাঁর পাদপদ্ম আমাদের স্তনে রাখেন, তখন সেই স্তনকেও আমরা কঠিন বলে মনে করি। অথচ তিনি হাঁটছেন।" তাঁরা এই চিন্তায় মগ্ন থাকতেন। আর তাঁরা কাঁদতেন। তাঁরা শ্রীকৃষ্ণকে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরতে দেখার জন্য খুব উদ্বিগ্ন থাকতেন। তাঁরা রাস্তায়, ছাদের ওপর দাঁড়িয়ে থাকতেন, "এখন কৃষ্ণ ফিরে আসছেন তাঁর বন্ধুদের সাথে..." এই হচ্ছে কৃষ্ণভাবনা। এই হচ্ছে... একজন ভক্ত যখন শ্রীকৃষ্ণের চিন্তায় গভীরভাবে নিমগ্ন থাকেন, তখন শ্রীকৃষ্ণ তার নিকট থেকে অনুপস্থিত হতে পারেন না। এটি হচ্ছে কৃষ্ণভাবনামৃতের প্রক্রিয়া।

তো কুন্তী দেবী এখানে খুব উদ্বিগ্ন ছিলেন যে শ্রীকৃষ্ণ অনুপস্থিত হবেন। কিন্তু প্রতিক্রিয়াটি হবে, শ্রীকৃষ্ণ যখন শারীরিক ভাবে অনুপস্থিত হবেন, তিনি আরও বেশী করে, আমি বোঝাতে চাচ্ছি, যথাযথভাবে ভক্তের হৃদয়ে উপস্থিত হবেন। তাই শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর শিক্ষা হচ্ছে এই বিপ্রলম্ভ সেবা। তাঁর ব্যবহারিক জীবনেও তিনি শ্রীকৃষ্ণকে খুঁজতেন। গোবিন্দবিরহেণ মে। শুন্যায়িতং জগৎ সর্বং গোবিন্দবিরহেণ মে। শ্লোকটি কি ছিল? চক্ষুষা প্রাবৃষায়িতম্‌, চক্ষুষা প্রাবৃষায়িতম্‌, শুন্যায়িতং জগৎ সর্বং গোবিন্দবিরহেণ মে (চৈচ অন্ত্য ২০.৩৯, শ্রীশিক্ষাঅষ্টকম্‌ ৭)। তিনি এমনভাবে কাঁদতেন যেন তাঁর চোখ থেকে প্রবল বেগে বর্ষার ধারা নির্গত হচ্ছে, আর তিনি শ্রীকৃষ্ণকে ছাড়া সব কিছু শুন্য বলে অনুভব করতেন, বিরহ, বিপ্রলম্ভ। তো সম্ভোগ আর বিপ্রলম্ভ। শ্রীকৃষ্ণের সাথে মিলিত হওয়ার দুটি স্তর রয়েছে। সম্ভোগ মানে যখন তিনি শারিরিক ভাবে উপস্থিত থাকেন। এটিকে বলে সম্ভোগ। ব্যক্তিগতভাবে কথা বলা, সরাসরি মিলিত হওয়া, আলিঙ্গন করা, এটিকে বলে সম্ভোগ। অন্যটি হচ্ছে বিপ্রলম্ভ। দুইভাবেই একজন ভক্ত লাভবান হতে পারেন।