BN/Prabhupada 0848 - কৃৃষ্ণতত্ত্ব না জেনে কেউই গুরু হতে পারে না



741227 - Lecture SB 03.26.18 - Bombay

যখন শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু এবং রামানন্দ রায় পারমার্থিক উপলব্ধি নিয়ে আলোচনা করছিলেন ... রামানন্দ রায় ছিলেন শুদ্র পরিবারের এবং তিনি গৃহস্থ ও মাদ্রাজের গভর্নর ছিলেন, রাজনীতিকও ছিলেন শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু তাঁকে প্রশ্ন করছিলেন এই হচ্ছে মহাপ্রভুর লীলা , মুকম্‌ করোতি বাচালম্‌ (CC Madhya 17.80) তিনি কিভাবে সেই শুদ্র, গৃহস্থ, রাজনীতিবিদকে গুরু করলেন। চৈতন্য মহাপ্রভুর গুরু কেউই চৈতন্য মহাপ্রভুর গুরু হতে পারেন না। কিন্তু তিনি কেবল সেই ভূমিকায় ছিলেন মহাপ্রভু প্রশ্ন করছিলেন, এবং রামানন্দ রায় উত্তর দিচ্ছিলেন তাহলে ভেবে দেখো তিনি কতোটা উন্নত অবস্থানে ছিলেন তিনি ইতস্তত করছিলেন এবং যখন খুব কঠিন প্রশ্ন করা হচ্ছিল তিনি উত্তর দিতে সমর্থ ছিলেন, তিনি একটি সঙ্কোচ বোধ করছিলেন "প্রভু আপনি অনেক উন্নত ব্রাহ্মণ পরিবারের এবং পরম বিদ্বান ব্যক্তি এবং এখন আপনি সবচেয়ে উন্নত আশ্রম সন্ন্যাস নিয়েছেন

সন্ন্যাস খুব সম্মানিত অবস্থান। এখনও ভারতবর্ষে খুব সম্মান করা হয় যেখানেই সন্ন্যাসী যান, অন্ততপক্ষে গ্রামে তাঁরা সম্মান করে প্রণাম জানায়। এবং সব ধরণের সেবার সামগ্রী নিয়ে আসে। এখনও শাস্ত্র অনুযায়ী, যদি কোন সন্ন্যাসীকে যথাযথ সম্মান না দেয়া হয় তাহলে প্রায়শ্চিত্ত হিসেবে তাঁকে কমপক্ষে একদিন না খেয়ে থাকতে হত। এটাই বৈদিক ব্যবস্থা কিন্তু অনেক সন্ন্যাসীরা এর সুবিধা নিতে চাইছে। তাই আমরা এসব সম্মান নিয়ে মাথা ঘামাই না শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুও কোন ভণ্ড সন্ন্যাসী ছিলেন না। তিনি একজন প্রকৃত সন্ন্যাসী ছিলেন এবং রামানন্দ রায়ও একজন প্রকৃত গৃহস্থ ছিলেন , তাই তিনি সংকোচ বোধ করছিলেন তাঁকে উৎসাহিত করার জন্য শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু বলেছিলেন "না, না, আপনি কেন সংকোচ বোধ করছেন? কেন আপনি নিজেকে নীচ মনে করছেন? আপনি গুরু।" "আমি কিভাবে গুরু হলাম?" "যেই কৃষ্ণতত্ত্ববেত্তা সেই গুরু হয়" (চৈতন্য চরিতামৃত মধ্য ৮/১২৮) কারণ কৃষ্ণতত্ত্ববেত্তা হওয়া কোন সাধারণ অবস্থা নয় যততাম্‌ অপি সিদ্ধানাম্‌ কশ্চিদ্‌ বেত্তি মাম্‌ তত্ত্বঃ (গীতা ৭/৩) যিনি কৃষ্ণকে জানতে পেরেছেন তিনি কোন সাধারণ ব্যক্তি নন যততাম্‌ অপি সিদ্ধানাম্‌ (গীতা ৭/৩) । তিনি সবার ঊর্ধে , এমনকি সিদ্ধদেরও "তাহলে আপনি কেন সংকোচ করছেন? আপনি কৃষ্ণ তত্ত্ববেত্তা , তাই আমি আপনাকে জিজ্ঞাসা করছি" এই হচ্ছে তাঁর অবস্থান।

এই কৃষ্ণ ভাবনামৃত আন্দোলন হচ্ছে মানুষদের প্রশিক্ষণ দেয়া, যারা আমাদের কাছে আসছে সিদ্ধদের চেয়েও অনেক অনেক উন্নত, অনেক উন্নত আর এটা খুবই সহজ। যে কেউ এই গুরু হতে পারে যে... গুরু মানে যিনি সিদ্ধদের চেয়েও ওপরে.। কৃষ্ণতত্ত্ববেত্তা। যেই কৃষ্ণতত্ত্ববেত্তা সেই গুরু হয়। (চৈতন্য চরিতামৃত মধ্য ৮/১২৮) কৃষ্ণ তত্ত্ব না জানলে কেউ গুরু হতে পারে না কোন সাধারণ মানুষ না। যোগী, কর্মী, জ্ঞানী , তাঁরা গুরু হতে পারে না সেটি শাস্ত্রে অনুমোদন করা হয় নি। কারণ এমনকি একজন জ্ঞানী তাঁকে বহু বহু জন্মের পর কৃষ্ণকে জানতে হয়, একজন্মে নয়। বহু জন্ম লাগে যদি সে তাঁর জ্ঞানপন্থার দ্বারা পরম সত্যকে জানতে চায়, জল্পনা কল্পনার দ্বারা তাহলেও তাঁকে বহু বহু জন্ম নিতে হবে। তাহলে একদিন সৌভাগ্যবান হবে যদি সে কোন ভক্তের সান্নিধ্যে আসে, তাহলে হয়ত তাঁর জন্য কৃষ্ণকে জানা সম্ভব হতে পারে

সেই কথা ভগবদগীতায় বলা হয়েছে, বহুনাম্‌ জন্মনামন্তে জ্ঞানবান্মাম্‌ প্রপদ্যতে (গীতা ৭/১৯) কে প্রপত্তি স্বীকার করে? কে শ্রীকৃষ্ণের শরণাগত হয়? যদি না কেউ কৃষ্ণকে পূর্ণরূপে জানতে পারে, তাহলে সে কেন আত্মসমর্পণ করবে? শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, সর্বধর্মান্‌ পরিত্যজ্য মামেকম্‌ শরণম্‌ ব্রজ (গীতা ১৮/৬৬) বড় বড় পণ্ডিতেরা বলে, "এটা বেশি বেশি "শ্রীকৃষ্ণ দাবী করছেন যে তাঁর শরণাগত হতে মামেকম্‌ শরণম্‌ ব্রজ, এটা খুব বেশি বেশি"। এটা বেশি বেশি নয়। এটাই আসল অবস্থান। যদি সে সত্যিই জ্ঞানে উন্নত হয় বহুনাম্‌ জন্মনামন্তে (গীতা ৭/১৯) এটি একজন্মে পাওয়া সম্ভব না যদি তিনি পরম সত্যকে জানতে জ্ঞানের পন্থা গ্রহণ করেন তাহলে বহু বহু জন্মের পর যখন তিনি প্রকৃত জ্ঞান লাভ করেন তখনই কেবল ভগবানের কাছে শরণাগত হন বাসুদেবম্‌ সর্বমিতি স মহাত্মা সুদুর্লভঃ । সেই ধরণের মহাত্মা তোমরা অনেক মহাত্মা দেখবে। কেবল পোশাক পরিবর্তন করেই। সেই রকম মহাত্মা নয়। স মহাত্মা সুদুর্লভঃ । সেই রকম মহাত্মা পাওয়া অত্যন্ত দুর্লভ। কিন্তু আছে যদি কেউ ভাগ্যবান হন, তাহলে সেই রকম মহাত্মার সঙ্গ পাবেন এবং তাঁর জীবন ধন্য হবে। স মহাত্মা সুদুর্লভঃ