BN/Prabhupada 1011 - ধর্ম অবশ্যই ভগবানের থেকে জানতে হবে। নিজের ধর্ম আপনি নিজে বানাতে পারেন না



750713 - Conversation B - Philadelphia

প্রভুপাদঃ এই ভদ্রলোক?

ভক্ত পুত্রঃ ইনি আমার বাবা।

প্রভুপাদঃ ওহ। অনেক ধন্যবাদ। (মৃদু হাসি)

বাবাঃ আপনার কৃপা...

ভক্তঃ আর আমার মা।

মাঃ হরে কৃষ্ণ।

প্রভুপাদঃ ওহ। আপনারা সবাই খুব ভাগ্যবান। আপনারা এত ভালো একটি পুত্র পেয়েছেন।

বাবাঃ ধন্যবাদ।

প্রভুপাদঃ হ্যাঁ। আর সে আপনাকে কৃষ্ণভাবনাময় হওয়ার মাধ্যমে সর্বোত্তম সেবা প্রদান করছে।

বাবাঃ সর্বোত্তম কি?

ভক্তঃ সেবা।

প্রভুপাদঃ এমনটি কখনও মনে করবেন না যে সে বাড়ির বাইরে চলে গিয়েছে, সে হারিয়ে গিয়েছে। সে আপনার সর্বোত্তম সেবা করছে।

বাবাঃ ভালো, আমারা তাঁর প্রতি খুব খুশি, আর আমারা সব সময়ই তা থাকব। তাঁকে সুখ খুঁজে পেতে সাহায্য করার জন্য ধন্যবাদ। এটি এমন কিছু যা সে আপনার আদেশের মধ্য দিয়ে খুঁজে পেতে সক্ষম হয়েছে। (অস্পষ্ট)

প্রভুপাদঃ ধন্যবাদ। তাঁরা খুব ভালো ছেলে।

বাবাঃ এটি আমার কাছে খুব আশ্চর্য লাগে, যে আপনি কি করে আপনার মধ্যে এই যে গতিবেগ সেটা ধরে রাখার শক্তি পান? আপনি কি আমাকে বলবেন কিভাবে তা করেন? (হাসি) আমি আপনার থেকে কয়েক বছরের ছোট, এই গতিবেগ ধরে রাখাটা আমার কাছে খুব কঠিন লাগে।

প্রভুপাদঃ প্রক্রিয়াটি খাঁটি, যার জন্য আমি সুপারিশ করি আর তারা তা অনুসরণ করে। তাই এটি নিশ্চিত।

ভক্ত পুত্রঃ হ্যাঁ। তিনি বলছেন যে, ভগবানের আরাধনার মাধ্যমে আমাদের যে জীবন ধারাটি তা তোমাকে শক্তি ধরে রাখতে সাহায্য করবে।

প্রভুপাদঃ ঠিক যেমন ডাক্তার। তিনি আপনাকে ঔষধ দেন, আর একটি প্রক্রিয়া বলে দেন যে, কি পরিমাণ ঔষধ খাবেন, কিভাবে খাবার খাবেন। রোগী যদি তা অনুসরণ করে, তবে সে প্রতিকার লাভ করে। (বিরতি) মানব জীবন হচ্ছে একটি সুযোগ। মানুষের পক্ষেই ভগবদ্‌ উপলব্ধির পন্থা অবলম্বন করা সম্ভব। সে কোথায় জন্মগ্রহণ করেছে, সেটা কোন ব্যাপার নয়। ভারতে নাকি ভারতের বাইরে সেটা কোন ব্যাপার নয়। যেকোনো মানুষই তা গ্রহণ করতে পারে। এটিই হচ্ছে মানব জীবন আর পশু জীবনের মধ্যে পার্থক্য। প্রাণী বা কুকুর সে শুধু জানে কিভাবে ঘেউ ঘেউ করতে হয়, এই যা। তাকে এই পদ্ধতি শিক্ষা দেয়া যাবে না। কিন্তু একটি মানুষের ক্ষেত্রে তা সম্ভব। তার সেই বুদ্ধি রয়েছে, প্রত্যেক মানুষের তা রয়েছে। তাই মানুষ হয়ে যদি আমরা এই পদ্ধতি গ্রহণ না করি, কিভাবে কৃষ্ণভাবনাময় হতে হয়, তাহলে আমারা কুকুরই থেকে যাব। কারণ আমরা সুযোগটি হারাচ্ছি।

বাবাঃ সেই জিনিসটা কি যা কৃষ্ণভাবনামৃত, অন্যান্য ধর্ম মানুষকে যা দিচ্ছে তার তুলনায় বেশী দিচ্ছে?

প্রভুপাদ; এটি ধর্ম। আমি ইতিমধ্যেই ব্যাখ্যা করেছি যে ধর্ম মানে হচ্ছে ভগবানকে ভালোবাসা। এটি হচ্ছে ধর্ম। যেখানে ভগবানের প্রতি ভালোবাসা নেই, সেখানে কোন ধর্ম নেই। ধর্ম মানে- আমি ইতিমধ্যেই ব্যাখ্যা করেছি- ভগবানকে জানা এবং তাঁকে ভালোবাসা। কাজেই আপনি যদি না জানেন যে ভগবান কে, তাহলে তাঁকে ভালোবাসার প্রশ্ন কোথায়? তাই সেটি ধর্ম নয়। এগুলো ধর্মের নামে চলছে। কিন্তু ধর্ম মানে হচ্ছে ভগবানকে জানা এবং তাঁকে ভালোবাসা। ধর্মং তু সাক্ষাদ্ভগবৎপ্রণীতং (শ্রীমদ্ভাগবত ৬.৩.১৯)। (একপাশেঃ) তুমি কি এই শ্লোকটি খুঁজে বের করতে পারবে? আমাকে দিন। তুমি খুঁজে পাওনি?

নিতাইঃ হ্যাঁ, ৩.১৯।

প্রভুপাদঃ তৃতীয় অধ্যায়, ঊনিশ। নিতাইঃ ধর্মং তু সাক্ষাদ্ভগবৎপ্রণীতং ন বৈ বিদুঃ ঋষয়ঃ নাপি দেবাঃ ন সিদ্ধমুখ্যা অসুরা মনুষ্যাঃ কুতো নু বিদ্যাধরচারণাদয়ঃ (শ্রীমদ্ভাগবত ৬.৩.১৯)।

প্রভুপাদঃ ধর্মং তু সাক্ষাদ্ভগবৎপ্রণীতংঃ "প্রকৃত ধর্ম স্বয়ং ভগবান দ্বারা প্রণীত।" ঠিক যেমন আইন। আইন মানে কর্মের প্রক্রিয়া যা সরকার কর্তৃক প্রণয়ন করা হয়। ঘরে বসে আপনি আইন বানাতে পারেন না। এটি পরিষ্কার?

বাবাঃ না, আমার ভাষাগত সমস্যা আছে, আমি ভয় পাচ্ছি।

জয়তীর্থঃ তিনি বলছেন যে আইন মানে হচ্ছে যা সরকার কর্তৃক দেয়া হয়েছে। আপনি ঘরে বসে নিজেই নিজের আইন বানাতে পারেন না। একইভাবে, ধর্ম মানে হচ্ছে যা ভগবান কর্তৃক স্পষ্টভাবে ঘোষণা করা হয়েছে। আপনি নিজেই নিজের পথ তৈরি করতে পারেন না।

বাবাঃ ভালো, আমার মনে হচ্ছে আমি বিষয়টা হারিয়ে ফেলছি। আমার প্রশ্নটা ছিল হরে কৃষ্ণ ভাবনামৃত এমন কি দিবে যা অন্যান্য ধর্মগুলো এখনও দেয়নি...

প্রভুপাদঃ এটিই উপহার যে আপনি ধার্মিক হতে চান, তো আপনি ভগবানের কাছ থেকে ধর্মের নিয়ম নীতি গুলো জানার চেষ্টা করুন। কারণ যদি কেউ আইনজীবী হয়, যদি কেউ আইনজীবী হতে চায়, তাকে অবশ্যই সরকার কর্তৃক প্রদত্ত আইন সম্পর্কে জানতে হবে। সে বাসায় বসে আইনজীবী হতে পারবে না। একইভাবে, আপনি যদি ধার্মিক হতে চান, ধর্ম কি তা ভগবানের কাছ থেকে জানতে হবে। আপনি নিজেই নিজের ধর্ম বানাতে পারেন না। এটি ধর্ম নয়। এটিই প্রথম নীতি। কিন্তু আপনি যদি না জানেন ভগবান কে, ভগবান প্রদত্ত আদেশ গুলো কি, তাহলে কিসের ধর্ম? এটিই চলছে। প্রত্যেকেই তার নিজের ধর্ম বানাচ্ছে। এটি হচ্ছে আধুনিক উপায়, ধর্ম হচ্ছে ব্যক্তিগত; যে কেউ যে কোন ধরণের ধর্ম গ্রহণ করতে পারে। এটিই হচ্ছে উদারনীতি, তাই না?

জয়তীর্থঃ হ্যাঁ।

প্রভুপাদঃ তাকে একটু বোঝাও।

জয়তীর্থঃ তো আপনি কি বুঝতে পেরেছেন? এই হরে কৃষ্ণ আন্দোলনের ধারণাটি বৈদিক কর্তৃপক্ষের ওপর ভিত্তিশীল। আর বৈদিক সাহিত্য সমূহ সরাসরি শ্রীকৃষ্ণের কাছ থেকে এসেছে। সুতরাং আমরা শুধুমাত্র শ্রীকৃষ্ণ যা বলেছেন, সেটাকেই সত্য বলে গ্রহণ করি, আর অন্য কারো মানসিক জল্পনা কল্পনাকে সত্য বলে স্বীকার করিনা। আর এটিই হচ্ছে আধুনিক যুগের অন্যান্য ধর্মীয় আন্দোলনের ক্ষেত্রে সমস্যা যে, তারা কিছু মতবাদের ওপর নির্ভরশীল অথবা...

প্রভুপাদঃ মানসিক জল্পনা কল্পনা।

জয়তীর্থঃ...সাধারণ মানুষের দর্শন। তো এটি হচ্ছে প্রাথমিক পার্থক্য।

প্রভুপাদঃ ভগবান ভগবদ্গীতায় বলেননি, এমন কোন কিছু আমরা বলি না। তাই এটি সর্বত্র আবেদনযোগ্য হচ্ছে। যদিও এটি সংস্কৃত ভাষায়, তবুও এটি আবেদনযোগ্য। যেমন ধরুন আপনি রাস্তায় গেলেন, সেখানে সাইনবোর্ডে লিখা আছে, "রাখুন...

জয়তীর্থঃ "ডানদিকে রাখুন।"

প্রভুপাদঃ "ডানদিকে রাখুন," এটি আইন। আমি বলতে পারব না যে, "আমি যদি বামদিকে রাখি, তাহলে সমস্যাটা কোথায়?" (হাসি) তাহলে আমি অপরাধী হবো। আপনি নির্দেশ দিতে পারেন না। সরকার বলেছে, "ডানদিকে রাখুন।" আপনাকে তাই করতে হবে। এটিই আইন। যদি আপনি ভঙ্গ করেন, তাহলে আপনি অপরাধী। জরিমানা দিতে হবে। কিন্তু সাধারণভাবে, একজন মনে করতে পারে, "এখানে সমস্যাটা কোথায়, যদি ডানদিকে না রাখি, যদি আমি বামদিকে রাখি?" সে এরকম ভাবতে পারে, কিন্তু সে জানে না যে এটি অপরাধমূলক।