BN/Prabhupada 1018 - প্রাথমিক পর্যায়ে আমাদের শ্রীরাধাকৃষ্ণকে শ্রীলক্ষ্মীনারায়ণ ভাবে সেবা করা উচিত



730408 - Lecture SB 01.14.44 - New York

প্রদ্যুম্নঃ অনুবাদঃ "অথবা তুমি কি শূন্যতা অনুভব করছ তোমার প্রিয়তম সখা শ্রীকৃষ্ণের বিরহে? হে অর্জুন ভাই, এছাড়া তোমার অশান্তির আর কোন কারণই আমি ভাবতে পারছি না।"

প্রভুপাদঃ তো শ্রীকৃষ্ণ ছিলেন অর্জুনের অন্তরঙ্গ সখা। শুধু অর্জুনই নয়, সব পাণ্ডবদের। তাই তাঁরা শ্রীকৃষ্ণের বিরহ সহ্য করতে পারতেন না। এটি কৃষ্ণভক্তের লক্ষণ। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু বলেছেন যে "আমার কৃষ্ণের প্রতি একটুও ভালোবাসা নেই।" শ্লোকটি আমি এই মুহূর্তে ভুলে গিয়েছি... ন প্রেমগন্ধ 'স্তি (চৈচ ২.৪৫)। "তোমার কৃষ্ণের প্রতি কোন প্রেম নেই? তুমি শ্রীকৃষ্ণের জন্য সর্বদাই ক্রন্দন করছ, কিন্তু তবুও তুমি বলছ যে শ্রীকৃষ্ণের প্রতি তোমার কোন ভালোবাসা নেই?" "না, আমি লোক দেখানোর জন্য কাঁদছি। আসলে আমি কৃষ্ণের ভক্ত নই।" "কেন?" এই কারণে যে "যদি আমি শ্রীকৃষ্ণের ভক্ত হতাম, তাহলে তাঁকে ছেড়ে কি করে আমি বেঁচে আছি? আমি এখনও মরে যাইনি। তার মানে আমার কৃষ্ণের জন্য কোন ভালোবাসা নেই।" এটি হচ্ছে প্রেমের লক্ষণ যে- একজন প্রেমিক এক মুহূর্তও বাঁচতে পারে না প্রেমাস্পদের সঙ্গ ছাড়া হয়ে। এটি প্রেমের লক্ষণ।

তো এই প্রেম শুধুমাত্র শ্রীরাধাকৃষ্ণের মধ্যে প্রশংসনীয় অথবা শ্রীকৃষ্ণ এবং গোপীদের মধ্যে; অন্য কারো ক্ষেত্রে নয়। আসলে আমরা জানি না প্রেমের অর্থ কি। ঠিক যেমন শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু বলেছেন যে,

আশ্লিষ্য বা পাদরতাং পিনষ্টু মাম্‌
অদর্শনান্মর্মহতাং করোতু বা
যথা তথা বা বিদধাতু লম্পটো
মৎপ্রাণনাথস্তু স এব না পরঃ
(চৈচ অন্ত্য ২০.৪৭ শিক্ষাষ্টক ৮)।
যুগায়িতং নিমিষেণ
চক্ষুষা প্রাবৃষায়িতম্‌
শূন্যায়িতং জগৎ সর্বং
গোবিন্দবিরহেণ মে
(চৈচ অন্ত্য ২০.৩৯, শিক্ষাষ্টক ৭)।

গোবিন্দ বিরহ। বিরহ মানে বিচ্ছেদ। মানে রাধারানী... শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু রাধারানীর ভুমিকা পালন করছেন। শ্রীকৃষ্ণ, যখন তাঁর নিজেকে অনুভব করতে পারেনি... শ্রীকৃষ্ণ অসীম। তিনি এতোটাই অসীম যে শ্রীকৃষ্ণ নিজেই তা জানেন না। এই হচ্ছে অসীম। অসীম তাঁর নিজের অসীমতা সম্পর্কে জানতে পারেনা। তাই শ্রীকৃষ্ণ রাধারাণীর ভাব অবলম্বন করেছেন, আর তিনি হচ্ছেন শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু। এই ছবিটি খুব সুন্দরঃ শ্রীকৃষ্ণ রাধারাণীর প্রেমময়ী ভাব নিয়ে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু রূপে আবির্ভূত হচ্ছেন। শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য রাধাকৃষ্ণ নহে অন্য (শ্রীগুরুপরম্পরা ৬)। সুতরাং শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুকে আরাধনা করার মাধ্যমে আমরা যুগপৎ রাধাকৃষ্ণেরও আরাধনা করছি। রাধাকৃষ্ণের আরাধনা খুব কঠিন। তাই আমরা রাধাকৃষ্ণের যেই আরাধনাই করছি না কেন, সেটা হচ্ছে রাধাকৃষ্ণের লক্ষ্মীনারায়ণ রূপে। প্রাথমিক পর্যায়ে আমাদের শ্রীরাধাকৃষ্ণকে শ্রীলক্ষ্মীনারায়ণ ভাবে সেবা করতে হয়, সম্ভ্রম এবং শ্রদ্ধা সহকারে, কঠোরভাবে নিয়মকানুন অনুসরণ করে। অন্যথায়, বৃন্দাবনের ভক্তরা, তাঁরা রাধাকৃষ্ণকে, তাঁরা শ্রীকৃষ্ণকে এজন্য পূজা করেন না যে তিনি ভগবান, কিন্তু তাঁরা শ্রীকৃষ্ণের পূজা করেন এটি ঠিক পূজা নয়- এটি পূজা বা আরাধনারও ঊর্ধ্বে। এটি হচ্ছে শুধুই ভালোবাসা। ঠিক যেমন তোমার প্রেমিককে ভালোবাস। এটির অর্থ পূজা করা নয়। এটি স্বতঃস্ফূর্ত, হৃদয়বৃত্তি। এটিই হচ্ছে বৃন্দাবনের অবস্থান। তো এমনকি যদিও আমরা বৃন্দাবন ভাবের সেই সর্বোচ্চ স্তরে অধিষ্ঠিত নই, তবুও, আমরা যদি শ্রীকৃষ্ণের বিরহ অনুভব না করি, তাহলে আমাদের অবশ্যই জানতে হবে যে, আমরা এখনও শ্রীকৃষ্ণের খাঁটি ভক্ত নই। এটিই চাইঃ বিরহ অনুভব।