BN/Prabhupada 1026 - যদি আমরা বুঝতে পারি যে, আমরা ভোক্তা নই, শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন ভোক্তা, তাহলে সেটি চিন্ময় জগত



731129 - Lecture SB 01.15.01 - New York

যদি আমরা বুঝতে পারি যে, আমরা ভোক্তা নই, শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন ভোক্তা, তাহলে সেটি চিন্ময় জগত। আমরা বিভিন্ন উপায়ে সুখী হতে চাই, প্রত্যেকেই তার নিজস্ব পরিকল্পনা করছে, "এখন এটি হচ্ছে..." কিন্তু বদমাশরা জানে না যে, সুখ লাভের প্রকৃত উপায় কি, তা হলো শ্রীকৃষ্ণ। তারা এটা জানে না। ন তে বিদুঃ স্বার্থগতিং হি বিষ্ণুং দুরাশয়াঃ যে বহিরর্থমানিনঃ (শ্রীমদ্ভাগবত ৭.৫.৩১)। তোমরা দেখতে পাচ্ছ, তোমাদের দেশের মানুষরা বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা করছে। বহু সংখ্যক গগনচুম্বী অট্টালিকা, বহু মোটর গাড়ি, অনেক বড় বড় শহর, কিন্তু কোন সুখ নেই। কারণ তারা জানে না কি হারিয়ে গিয়েছে। এই হারিয়ে যাওয়া বস্তুটাই আমরা দিচ্ছি। এখানে, "তুমি শ্রীকৃষ্ণকে গ্রহণ কর, আর সুখী হও।" এটিই আমাদের কৃষ্ণভাবনামৃত। শ্রীকৃষ্ণ আর জীব খুব অন্তরঙ্গভাবে সম্পর্কিত। পিতা পুত্রের মতো, অথবা বন্ধু বন্ধুর মতো, অথবা প্রভু আর দাস এই রকম। আমরা খুব ঘনিষ্টভাবে সম্পর্কিত। কিন্তু যেহেতু আমরা শ্রীকৃষ্ণের সাথে আমাদের অন্তরঙ্গ সম্পর্কের কথা ভুলে গিয়েছি, আর এই জড় জগতে সুখী হওয়ার চেষ্টা করছি, তাই আমাদেরকে কঠোর দুর্দশার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। এই হচ্ছে অবস্থা। কৃষ্ণ ভুলিয়া জীব ভোগ বাঞ্ছা করে।

আমরা জীবাত্মা, আমরা এই জড় জগতের মধ্যে সুখী হওয়ার চেষ্টা করছি... "তুমি এই জড় জগতের মধ্যে কেন, চিন্ময় জগতের মধ্যে নয় কেন?" চিন্ময় জগতে কেউ ভোক্তা হতে পারে না, সেখানে শুধুমাত্র পরম পুরুষোত্তম ভগবান, ভোক্তারং যজ্ঞতপসাং সর্ব (ভগবদ্গীতা ৫.২৯)... কোন ভুল নেই। সেখানেও জীব রয়েছে, কিন্তু তাঁরা খুব ভালোভাবেই জানে যে, প্রকৃত ভোক্তা বা মালিক হচ্ছেন শ্রীকৃষ্ণ। এই হচ্ছে চিন্ময় রাজ্য। একইভাবে, এমন কি এই জড় জগতেও, আমরা যদি যথাযথ ভাবে বুঝতে পারি যে, আমরা ভোক্তা নই, শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন ভোক্তা, তাহলে সেটি চিন্ময় জগত। এই কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলন সবাইকে বোঝানোর চেষ্টা করছে, যে আমরা , আমরা ভোক্তা নই। শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন ভোক্তা। ঠিক যেমন, এই শরীরটি। এখানে ভোক্তা হচ্ছে পাকস্থলী, আর চোখ, নাক, হাত, পা, মগজ আর অন্যান্য সবকিছু, এদের সকলের উচিত ভোগ্য সামগ্রী খুঁজে বের করা, আর সেটা পাকস্থলীকে দেয়া। এটিই স্বাভাবিক। একইভাবে, আমরা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অবচ্ছেদ্য অংশ, আমরা ভোক্তা নই।

প্রতিটি ধর্মেই এটি স্বীকৃত। ঠিক যেমন খ্রিষ্টান ধর্মেও এটি বলা হয়েছেঃ "হে ঈশ্বর, আমাদের প্রতিদিনের রুটি দাও।" রুটি আমরা তৈরি করতে পারি না। এটি অবশ্যই ভগবানের কাছ থেকে আসে। এটি বৈদিক বর্ণনাও। নিত্যো নিত্যানাং চেতনশ্চেতনানাম্‌ একো বহুনাং যো বিদধাতি কামান্‌ (কঠোপনিষদ ২.২.১৩)। ভগবান বা শ্রীকৃষ্ণ, তোমার জীবনের প্রয়োজনীয় সমস্ত কিছু প্রদান করেন, যেমনটি তুমি চাও, কিন্তু তুমি যদি তোমার পছন্দ মতো নিজের ভোগের জন্য তা গ্রহণ কর, তাহলেই তুমি ফাঁদে জড়িয়ে পরবে। কিন্তু তুমি যদি তোমার দ্বারা উপভোগ্য জিনিস গুলোকে এভাবে গ্রহণ কর যে, তেন ত্যক্তেন ভুঞ্জীথা (ঈশ্বোপনিষদ ১), যেন শ্রীকৃষ্ণ তোমাকে দিচ্ছেন, তখন তুমি সুখী হবে। যদি তুমি তৈরি কর... ঠিক যেমন একজন অসুস্থ রোগী, সে যদি তার খেয়ালখুশি মতো জীবন উপভোগ করতে চায়, সে শুধু তার রোগই বাড়িয়ে তুলবে। কিন্তু সে যদি তার জীবনধারাকে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চালায়, তাহলে সে রোগমুক্ত হবে... সুতরাং দুটি পন্থা আছে, প্রবৃত্তি আর নিবৃত্তি। প্রবৃত্তি মানে "আমার এটা খাওয়ার বা এটা ভোগ করার ঝোঁক রয়েছে। তাহলে কেন করব না? আমি এটি করব। আমার স্বাধীনতা রয়েছে।" "কিন্তু মহাশয়, তোমার কোন স্বাধীনতা নেই, তুমি শুধুমাত্র..." এটি হচ্ছে মায়া। তোমার কোন স্বাধীনতা নেই। আমাদের অভিজ্ঞতা রয়েছে। ধর এখানে খুব সুস্বাদু খাবার রয়েছে। যদি আমি মনে করি, আমার যত ইচ্ছা তত খাব, তাহলে পরের দিন আমাকে অনাহারে থাকতে হবে। তৎক্ষণাৎ আমাশয় অথবা বদহজম হবে।