BN/Prabhupada 1066 - অল্পবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষেরা মনে করে যে, পরম-তত্ত্ব হচ্ছে নির্বিশেষ



660219-20 - Lecture BG Introduction - New York

অল্পবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষেরা মনে করে যে, পরম-তত্ত্ব হচ্ছে নির্বিশেষ। সুতরাং পুরো ব্যবস্থা এইরকম যে সৃষ্টির কেন্দ্রবিন্দু, ও মুল ভোক্তা হচ্ছেন পরমেশ্বর ভগবান, আর জীব হচ্ছে, কেবলমাত্র সহযোগী। সহযোগিতার দ্বারা , সহযোগিতার মাধ্যমে তৃপ্তি অনুভব করে। সম্পর্কটা ঠিক প্রভু ও ভৃত্যের মতো। যদি প্রভু সন্তুষ্ট হয়, ‍যদি প্রভু পূর্নরূপে সন্তুষ্ট হয়, ভৃত্য এমনিতেই তৃপ্তি লাভ করবে। এটাই নিয়ম। তেমনই ভগবানের সেবা করাটাই হচ্ছে জীবের একমাত্র কর্ত্তব্য, জীব ভগবানের মতো সৃষ্টি করতে অভিলাষী এবং ভোগ করতে চায়, জীবের মধ্যেও এইগুলো আছে কারণ এইগুলো পরমেশ্বর ভগবানেরও রয়েছে। তিনি সৃষ্টি করেছেন, তিনি এই দৃষ্ট ভৌতিক জগতের সৃষ্টি করেছেন।

সুতরাং ভগবদ্গীতাতে আমরা সব কিছুই পুর্ন দেখতে পাব, পরম নিয়ন্তা, নিয়ন্ত্রণাধীন জীবসত্ত্বাসমূহ, দৃষ্ট ভৌতিক জগৎ, নিত্য কাল এবং কর্ম এই সব কিছুরই আলোচনা এখানে ব্যাখা করা হয়েছে। এইগুলি এক সাথে নিয়েই পূর্ণ পরম সত্য বলা হয়। এই পূর্ণ সত্তা ও আর পূর্ণ সত্য হলেন পুরুষোত্তম ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। আমি ব্যাখ্যা করেছি যে, তাঁরই বিভিন্ন শক্তিরাজির ফলে সমস্ত কিছুরই অভিপ্রকাশ ঘটে থাকে। এবং তিনি হলেন সম্যকভাবে পূর্ণ।

ভগবদ্গীতাতে নির্বিশেষ বহ্ম সম্বন্ধেও ব্যাখ্যা করা হয়েছে যে নির্বিশেষ ব্রহ্মও হচ্ছে পূর্ণ পরম পুরুষের অধীন ব্রহ্মণো হি প্রতিষ্ঠাহম্‌ (ভ. গী. ১৪.২৭)। নির্বিশেষ ব্রহ্মও। এটি... নির্বিশেষ ব্রহ্মের আরও বিশদ ব্যাখ্যা করে ব্রহ্মসুত্র্রতে বলা হয়েছে যে নির্বিশেষ ব্রহ্ম হচ্ছে রশ্মির মতো। যেভাবে সূ্র্য গোলকের সূর্য রশ্মি এখানে রয়েছে, তেমনি, নির্বিশেষ ব্রহ্ম হলো পরম পুরুষোত্তম ভগবানের দেহ নির্গত রশ্মিচ্ছটা। নির্বিশেষ ব্রহ্ম তাই পূর্ণ পরম-তত্ত্বের অসম্পূর্ণ উপলব্ধি, এবং পরমাত্মার ধারণাও তাই। ভগবদ্গীতার পুরুষোত্তম যোগেও ব্যাখ্যা করা হয়েছে। আমরা ভগবদ্গীতার পুরুষোত্তম-যোগ এর অধ্যায় পড়লে আমরা জানতে পারব যে পরমেশ্বর, পুরুষোত্তম, ভগবান হচ্ছেন ব্রহ্ম-তত্ত্ব ও পরমাত্মা-তত্ত্ব উভয়ের উর্দ্ধে পরম-তত্ত্ব।

পরমেশ্বর ভগবান হচ্ছেন সচ্চিদানন্দ বিগ্রহঃ(ব্রহ্ম সংহিতা ৫/১) ব্রহ্মসংহিতার শুরুতেই এই রকম বলা হয়েছে: ঈশ্বরঃ পরমঃ কৃষ্ণঃ সচ্চিদানন্দ বিগ্রহঃ। অনাদিরাদিগোবিন্দঃ সর্বকারণকারণম্।।(ব্রহ্ম সংহিতা ৫/১) পরমেশ্বর শ্রীকৃ্ষ্ণ, গোবিন্দ হচ্ছেন সর্ব-কারণের কারণ, সুতরাং পরমেশ্বর ভগবান সৎ(শাশ্বত, সনাতন), চিৎ(অনন্ত জ্ঞান) ও আনন্দের মূর্ত বিগ্রহ ব্রহ্ম উপলব্ধি হচ্ছে তাঁর সৎ(শাশ্বত, সনাতন) বৈশিষ্ট্যের উপলব্ধি। এবং পরমাত্মা উপলব্ধি হচ্ছে তাঁর সৎ-চিৎ রূপের উপলব্ধি। পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অপ্রাকৃত রূপকে উপলব্ধি করা হচ্ছে তাঁর সৎ, চিৎ এবং আনন্দের অপ্রাকৃত রূপকে পূর্ণভাবে অনুভব করা। বিগ্রহ অর্থ আপ্রাকৃত রূপ। বিগ্রহ অর্থ আপ্রাকৃত রূপ। অব্যক্তং ব্যক্তিমাপন্নং মন্যন্তে মামবুদ্ধয়ঃ (ভ. গী. ৭/২৪) অল্পবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষেরা মনে করে যে, পরম-তত্ত্ব হচ্ছে নির্বিশেষ। কিন্তু তিনি হচ্ছেন একজন অতীন্দ্রিয় অপ্রাকৃত পুরুষ। সমস্ত বৈদিক শাস্ত্রে এ কথা দৃঢ়ভাবে প্রতিপন্ন করা হয়েছে। ”নিত্যো-নিত্যানাং চেতনশ্চেতনানাম্”(কঠ উপনিষদ ২/২/১৩) সুতরাং, আমরা স্বতন্ত্র জীব ও ব্যক্তি হিসাবে, আমাদের ব্যক্তিগত স্বাতন্ত্র্য আছে। আমরা সকলে সতন্ত্র, তেমনই পরম তত্ত্বের সর্বোচ্চ স্তরে যিনি সর্ব-কারণের কারণ, তাঁরও রূপ আছে।তিনি পুরুষ। তাঁকে উপলব্ধি করা হলে তাঁর অপ্রাকৃত রূপের সবকিছু উপলব্ধি করা হয়ে যায়। তিনি পূর্ণ সৎ, চিৎ এবং আনন্দময় বিগ্রহ। বিগ্রহ মানে অপ্রাকৃত রূপ। অতএব পূর্ণ পরমতত্ত্ব কখনই নির্বিশেষ নয়। যদি তিনি নিরাকার হন বা অন্য কোন ভাবে কমতি থাকে, তবে তিনি পূর্ণ পরম তত্ত্ব হবেন কেমন করে। আমাদের অভিজ্ঞতায় যা আছে এবং যা আমাদের অভিজ্ঞতার অতীত, তা সবই ভগবানের মধ্যে বিদ্যমান। অন্যথায় তিনি পূর্ণ হতে পারে না। সম্যক্‌ সম্পূর্ণ পুরুষোত্তম ভগবানের রয়েছে বিপুল শক্তিরাজি। পরাস্য শক্তির্বিবিধৈব শ্রূয়তে(চৈ. চ. মধ্য ১৩.৬৫) শ্রীকৃষ্ণের শক্তির বিভিন্ন প্রকাশ কিভাবে হয়, তাও ভগবদ্গীতায় ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এই যে অনিত্য জড় জগৎ, যাতে আমরা অধিষ্ঠিত হয়েছি, এটি ও স্বয়ং পূর্ণ (শ্রীঈশোপনিষদ, আবাহন) সাংখ্য-দর্শন অনুযায়ী চব্বিশটি উপাদান দ্বারা, চব্বিশ টি উপাদান দ্বারা এই জড় জগৎ অনিত্যরূপে অভিব্যক্ত হয়েছে, তাদের সম্যক্‌রূপে সমন্বয়ের ফলে উদ্ভুত হয়েছে বিভিন্ন উপাদানের সম্পূর্ণ উৎস, যা এই ব্রহ্মাণ্ডের অস্তিত্ব ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অপরিহার্য। এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডকে রক্ষণাবেক্ষনের জন্য বহিঃস্থ কোন কিছু দ্বারা প্রচেষ্টার প্রয়োজন হয় না। এই অভিপ্রকাশের স্থায়িত্ব সম্যক সম্পূর্ণ শক্তি নির্ধারিত নিজস্ব সময়েরই উপর নির্ভরশীল। সেই সময় শেষ হয়ে গেলে পূর্ণত্বের পূর্ণ ব্যবস্থার নির্দেশে এর লয় হয়ে যায়।