BN/Prabhupada 0613 - ছয়টি জিনিসের প্রতি আমাদের বিশেষ যত্নবান হতে হবে



Lecture on BG 2.13-17 -- Los Angeles, November 29, 1968

নন্দরাণীঃ বিবাহিতা স্ত্রীলোকেরা যখন তাদের সন্তানদের কৃষ্ণভাবনামৃতে বড় করতে থাকেন, তখন মনে হয় যেন তাঁরা শ্রীকৃষ্ণের পরোক্ষ সেবা করছেন। তাদের কি মন্দিরে রান্না করা অথবা এরকম আরও কোনও সরাসরি কিছুর দ্বারা প্রত্যক্ষ সেবা করা উচিত? না কি সন্তানদের মানুষ করা বা লালনপালন করে বড় করা এবং গৃহস্থালি কর্মগুলি করাই যথেষ্ট সেবা? সেটি কি যথেষ্ট?

শ্রীল প্রভুপাদঃ হ্যাঁ। বিষয়টি হচ্ছে আমাদের কৃষ্ণভাবনাময় হতে হবে। ঠিক বিদ্যুতায়িত হওয়ার মতো। একটি তারের সাথে বিদ্যুৎ স্পর্শ করে, আরেকটি তারের সাথে জুড়ে দিয়ে, এভাবে আরেকটি তার, যদি তারে তারে সংস্পর্শ থাকে, তাহলে বাস্তবিকই বিদ্যুৎ সর্বত্রই থাকবে। ঠিক তেমনি যদি আমাদের কৃষ্ণভাবনামৃত সঠিকভাবে যুক্ত থাকে, তাহলে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষের কোনও প্রশ্নই আসে না। কারণ চিন্ময় জগতে কোন পার্থক্য নেই। যেই মাত্র এটি সরাসরি সংযুক্তির সাথে স্পর্শ হবে... একে বলা হয় শিষ্য পরম্পরা। কারণ এই প্রবাহটি একের পর এক ধারাবিহকভাবে নিচের দিকে নেমে আসছে, সুতরাং যদি আমরা এখানে যুক্ত হই, পারমার্থিক গুরুদেব তিনি এই প্রবাহের সাথে একইভাবে সংযুক্ত, তবে সেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ থাকবেই। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ-এর কোন প্রশ্ন আসে না। এবম্ পরম্পরা প্রাপ্তমিমং রাজর্ষয়ো বিদুঃ (গীতা ৪.২) আমাদের শুধু দেখতে হবে সংযোগটি বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে কি না। যদি সংযোগটি শক্ত করে লাগানো থাকে, তাহলে বিদ্যুৎ ঠিক প্রবাহিত হবেই। সুতরাং আমাদের বদ্ধ অবস্থায় অনেক অনেক সংশয় থাকবে, অনেক জটিলতা থাকবে। কিন্তু আমি ঠিক যেমনটা তোমাদেরকে উদাহরণ দিয়েছিলাম যে দ্রুত ফল লাভের জন্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠো না। আমাদেরকে শুধু অনুসরণ করতে হবে। আমাদের অনুসরণ করতে হবে। তৎ-তৎ-কর্ম-প্রবর্তণাৎ (উপদেশামৃত শ্লোক- ৩) শ্রীল রূপ গোস্বামী এটিই উপদেশ করেছেন। ছয়টি বিষয়ের প্রতি আমাদের বিশেষ যত্নবান হতে হবে, এবং কৃষ্ণভাবনামৃতে সিদ্ধিলাভ করতে চাইলে আরও ছয়টি বিষয় আমাদেরকে এড়িয়ে চলতে হবে।

সুতরাং উৎসাহাৎ ধৈর্যান্ নিশ্চয়াৎ। (উপদেশামৃত শ্লোক- ৩) প্রথম নীতিটি হল প্রত্যেককে অত্যন্ত উৎসাহী হতে হবে। তাকে অবশ্যই এটি বিশ্বাস করতে হবে যে, শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, ন মে ভক্ত্যা প্রণশ্যতি (BG 9.31), "আমার ভক্তের কখনও বিনাশ নেই" তাই "আমাকে শ্রীকৃষ্ণের ঐকান্তিক ভক্ত হতে হবে। আমাকে অবশ্যই শ্রীকৃষ্ণের অত্যন্ত ঐকান্তিক ভক্ত হতেই হবে"। এর নাম হচ্ছে উৎসাহ। তারপর রয়েছে ধৈর্যাৎ। "আমি শ্রীকৃষ্ণের ভক্ত হলাম, কিন্তু আমি এখনও সুখী হতে পারছি না। এটি কিভাবে হয়?" অতএব আপনাকে ধৈর্যশীল হতে হবে। অবশ্যই উৎসাহ থাকতে হবে, একই সঙ্গে ধৈর্যও অবশ্যই থাকতে হবে। এবং নিশ্চয়াৎ। নিশ্চয়াৎ মানে আপনাকে অবশ্যই দৃঢ় বিশ্বাস থাকতে হবে। "ওহ, শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন তাঁর ভক্তের কখনও বিনাশ নেই, তাহলে নিশ্চয়ই আমিও শেষ হয়ে যাবো না, যদিও আমি এটি এখন অনুভব করতে পারছি না। আমার দায়িত্ব পালন করা যাক।" উৎসাহাৎ ধৈর্যান্ নিশ্চয়াৎতৎ-তৎ-কর্ম-প্রবর্তণাৎ (উপদেশামৃত শ্লোক- ৩) কিন্তু আপনাকে দায়িত্বগুলি ঠিক সেভাবে পালন করতে হবে যেভাবে শাস্ত্রে করতে বলা হয়েছে। সতো বৃত্তেঃ আপনাকে এমন হলে চলবে না... কোনও প্রতারণা থাকলে চলবে না। সতো বৃত্তেঃ মানে হচ্ছে সরল ব্যবহার, নিষ্কপট ব্যবহার। সতো বৃত্তেঃ, এবং সাধু সঙ্গে, সাধুদের সান্নিধ্যে থেকে। সুতরাং প্রত্যেককে অবশ্যই উৎসাহী হতে হবে, ধৈর্যশীল হতে হবে, দৃঢ়বিশ্বাসী হতে হবে, নির্দিষ্ট কর্তব্যগুলি অবশ্যই পালন করতে হবে, প্রত্যেককে সাধু সং করতে হবে, এবং ব্যক্তিগত ব্যবহার-আচরণে অত্যন্ত নিষ্কপট হতে হবে। ছয়টি বিষয়। যদি এই ছয়টি বিষয় থাকে, তাহলে সাফল্য নিশ্চিত।